রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার কলিমহর ইউপির হোসেনডাঙ্গা গ্রামের স্কুল শিক্ষক মিজানুর রহমান ওরফে মুকু (৪৫) হত্যাকান্ডের ঘাতক সজীব কুমার শিকদার (২০)সহ জড়িত আরো তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পাংশা মডেল থানা পুলিশ।
গত ৬ই মে দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজবাড়ীর সুযোগ্য পুলিশ সুপার এমএম শাকিলুজ্জামানের সার্বিক দিক নির্দেশনায় ও সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) সুমন কুমার সাহার তত্ত্বাবধানে পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে পাংশার দক্ষিণাঞ্চলে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে অবৈধ ২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২টি ককটেল উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, পাংশা উপজেলার সরিষা ইউপির নাওড়া বনগ্রামের (নতুনপাড়া) মন্টু কুমার শিকদারের ছেলে সজীব কুমার শিকদার (২০), একই ইউপির শেখপাড়া গ্রামের নুর আলী মন্ডল ওরফে নুর আলমের ছেলে রাসেল মন্ডল (২০) ও কোলানগর গ্রামের সোহরাব শেখের ছেলে রমজান শেখ (৪০)।
গতকাল ৭ই মে গ্রেফতারকৃত সজীব শিকদার, রাসেল মন্ডল ও রমজান শেখের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পাংশা মডেল থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং ৫ ও ৬। পাংশা মডেল থানার এসআই মিজানুর রহমান বাদী হয়ে উল্লেখিত মামলা দু’টি দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে গতকাল ৭ই মে বেলা ১১টায় পাংশা মডেল থানায় প্রেস ব্রিফিংয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) সুমন কুমার সাহা হত্যাকান্ডের মোটিভ, পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান, গ্রেফতার, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি ও ককটেল উদ্ধারের সার্বিক তথ্য বিবরণ তুলে ধরেন।
এ সময় এএসপি (শিক্ষানবীশ) আসলাম হোসেন, পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান, এসআই মিজানুর রহমানসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্রমতে, কলিমহর ইউপির বসাকুষ্টিয়া গ্রামের মৃত ইব্রাহিম মন্ডলের ছেলে মিজানুর রহমান ওরফে মুকু (৪৫) পাংশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি হোসেনডাঙ্গা বাজারে সার-কীটনাশক ঔষধ ও কাঠের ব্যবসা পরিচালনা করতেন। গত ৩০শে এপ্রিল হোসেনডাঙ্গা বাজারস্থ তার সার ও কীটনাশক ঔষধের দোকানে হালখাতা ছিল। হালখাতা শেষে প্রতিদিনের মতো দোকান বন্ধ করে রাত ৯টার দিকে হোসেনডাঙ্গা গ্রামের মৃত আজগর আলী শেখের ছেলে মিজান শেখ ও দক্ষিণ খোর্দ্দবসা গ্রামের সুরুজ মন্ডলের ছেলে হযরত মন্ডল ওরফে হুরমতকে সাথে নিয়ে তিনি তার নিজ পালসার মোটর সাইকেলে (রাজবাড়ী-ল-১১৫৩৯৬) বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাত আনুমানিক ৯টা ১০ মিনিটের দিকে হোসেনডাঙ্গা বাজার হতে বসাকুষ্টিয়াগামী রাস্তার শ্রী বলাই বিশ্বাসের বাড়ীর সামনে পাকা রাস্তার উপর পৌঁছালে পূর্ব হতে ওৎ পেতে থাকা অজ্ঞাত নামা ৮/১০ জন অস্ত্রধারী ছিনতাইকারী তার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে এবং মোটরসাইকেল থেকে জোর করে তাদেরেেক নিচে নামিয়ে মুকু মাষ্টারকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা বাম কানের নিচে লতি বরাবর গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী শাহানারা বেগম বাদী হয়ে পাংশা মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। মামলা নং ০২, ধারা ৩০২/৩৪ পেনাল কোড।
পাংশা থানা পুলিশ ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে মোটিভ উদঘাটনসহ ৬জন আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পুলিশ তাদের কাছ থেকে ১টি একনলা বন্দুক ও ২পিস কার্তুজ উদ্ধার করে। প্রথম পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত বসাকুষ্টিয়া গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী অসিত চন্দ্র প্রামানিক, হাটবনগ্রামের শাকিবুল হাসান, একই গ্রামের আকাশ সরকার, রাম প্রসাদ সরকার, বিজয় সরকার ও বাদল সরকার। এই ৬জন আসামীর মধ্যে আকাশ সরকার, রাম প্রসাদ ও বাদল সরকার রাজবাড়ীর বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারেক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। অপর আসামী অসিত চন্দ্র প্রামানিককে ৩দিনের রিমান্ডে পাংশা মডেল থানায় নেয় পুলিশ। আকাশ সরকার, রাম প্রসাদ ও বাদল সরকার ৩জন আসামীর স্বীকারোক্তির তথ্যমতে পুলিশ হত্যা মামলার মূল ঘাতক সজীব শিকদারসহ জড়িত আরো ৩ জন আসামীকে গ্রেফতার করে।
এ নিয়ে স্কুল শিক্ষক মিজানুর রহমান মুকু হত্যা মামলায় সর্বমোট ৯জন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) সুমন কুমার সাহা। হালখাতার টাকা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে ওৎ পেতে থাকা ৮/১০জন অস্ত্রধারী ছিনতাইকারী এ হত্যাকান্ড ঘটায় বলে প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, এক সপ্তাহের মধ্যে চাঞ্চল্যকর স্কুল শিক্ষক মিজান হত্যাকান্ডের মোটিভ উদঘাটনসহ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার এবং মূল ঘাতকসহ জড়িতদের গ্রেফতারে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।