বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেছেন, বিএনপিকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের মধ্যে থেকে বিএনপিকে বের করে আনতে হবে। আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে হবে। বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে হলে সকলে বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
গতকাল ১৭ই জুন বিকালে শহরের নান্নু টাওয়ারে রাজবাড়ী কনভেনশন সেন্টারে সদর উপজেলা বিএনপির আয়োজনে সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন বিএনপির প্রতিনিধিদের সাথে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেন, দীর্ঘ সময় শেখ হাসিনার শাসনমলে আপনারা অনেক কষ্ট করেছেন। আমাদের অনেক নেতাকর্মীর নামে হামলা, মামলা হয়েছে। সারাদেশের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীরা জেল খেটেছে। শেখ হাসিনার পতনের পর গত ৫ই আগস্টের পর দেশে এক নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরও আমরা কিছু সমস্যায় পরলাম। ড. ইউনূস ক্ষমতায় আসলেন, তিনি ক্ষমতায় আসার পর আমরা খুব ঝামেলার মধ্যে পড়ে গেলাম। ইলেকশন কবে হবে এটা নিয়ে তিনি মন্তব্য করছিল না। ইলেকশন নিয়ে একটা সংশয় দেখা দিলো। ইউনূস সাহেব ও তার দলবল বলতে লাগলো সংস্কার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্ষমতায় থেকে যাবো না। আবার কেউ বললো হাসিনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্ষমতা থেকে যাবো না। আরও বিভিন্ন কথাবার্তা উঠে আসলো, সে এক সাংঘাতিক পরিস্থিতি তৈরি হলো।
তিনি বলেন, আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বললেন শেখ হাসিনা আমাদের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। আমাদের ভোট দিতে দেয়নি। ভোট হচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোট হচ্ছে আপনার মতামত, আপনার মতামতের ভিত্তিতে একজন নির্বাচিত হবে। যে প্রতিনিধিত্ব করবে সে রাষ্ট্র চালাবে। আমাদের নেতা তারেক রহমান বললেন দেশে নির্বাচন হতে হবে। দেশে নির্বাচন কবে হবে এটা একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব শুরু হলো। তখন ইউনূস সাহেব বললেন নির্বাচন হবে জুলাই মাসে। পরে আরেকবার বললেন এপ্রিল মাসে। এটা নিয়ে আমরা অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। বিষয়টি নিয়ে আমরা দল থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ছিলাম। পরে আমাদের নেতা তারেক রহমানের সাথে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বৈঠক হয় লন্ডনে। সেই বৈঠক শেষে জানা যায় নির্বাচন হবে ফেব্রুয়ারীতে। তবে যতদিন পর্যন্ত নির্বাচন না হচ্ছে আমাদের সংশয় কাটছে না। কিন্তু নির্বাচন না দিয়ে কোন উপায় থাকবে বলে আমার মনে হয় না।
তিনি আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী ভিতরে ভিতরে খুব তৎপর। তারা আমাদের নামে নানা কথা রটাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক সংগঠন। আওয়ামী লীগ তাদের নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলো। তখন জামায়াতকে বিএনপি যথেষ্ট সাপোর্ট দিয়েছে। সেই জামায়াতে ইসলামী সুযোগ বুঝে বিএনপির পিছনে লেগেছে। আমরা যখন বলছি নির্বাচন দিতে হবে তখন জামায়াত বলেছে সকল সংস্কারের পর নির্বাচন। ঢাকায় কিছু ছেলেপেলে আছে তাদের সাথে সুর মিলিয়ে বলে নির্বাচন এখন দরকার নেই।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়েছেন। সেখানে সকল সংস্কারের কথা বলা আছে। ওই ৩১ দফার মধ্যে সকল সমস্যার সমাধানের কথা বলা আছে। সুতরাং দেশে নির্বাচন হতে কোন সমস্যা নেই। যাইহোক লন্ডনের বৈঠকের পর জানা গেছে নির্বাচন ফেব্রুয়াবীতে হবে। আমরা ফেব্রুয়ারী মাসে নির্বাচন হবে এটা ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নেব। তাই আপনাদেরকে আজ এখানে ডাকা। নির্বাচনের আগে হয়তো এভাবে আর বসতে পারবো না। সেই সময়টাও হয়তোবা থাকবে না আমাদের। কারণ সময় যত আগাবে নির্বাচন তত দরজার কাছে এসে কড়া নাড়বে। তখন নির্বাচনের হাওয়া বইবে। তখন এইভাবে প্রতিনিধি সভা, মতবিনিময় সভা করার সময় থাকবে না। তখন নির্বাচনের মিছিল মিটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে। আমি আপনাদেরকে বলতে চাই বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মধ্যে থেকে বিএনপিকে বের করে আনতে হবে। আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে হবে। বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে হলে সকল বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সদস্য কে এ সবুর শাহীনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নঈম আনসারী, সাবেক সদস্য সচিব অধ্যক্ষ এবিএম মঞ্জুরুল আলম দুলাল, যুগ্ম আহ্বায়ক গাজী আহসান হাবিব, যুগ্ম আহ্বায়ক আকমল হোসেন ও জেলা বিএনপির সদস্য এ মজিদ বিশ্বাস প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব মামুনুল ইসলাম রনির সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আব্দুল গফুর মন্ডল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসমিন আক্তার প্রিয়া, সদর উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মোঃ লালন শেখ, উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি মোঃ মনজুর আলম, উপজেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব সজল, সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন সম্রাট, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক কাজী পলাশ, জেলা জাসাসের সাবেক সভাপতি শেখ আব্দুর রউফ হিটু, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক অশোক কুমার সরকার, জিয়া মঞ্চ রাজবাড়ী জেলার সদস্য সচিব মোঃ আনিছুর রহমান মাসুদ, রাজবাড়ী সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি ও চন্দনী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক শিকদার, মিজানপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান, সদর উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আল আমিন খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলামসহ জেলা বিএনপি ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ, চন্দনী, মিজানপুর, বাণীবহ, রামকান্তপুর, আলীপুর ও মূলঘর এই ৭টি ইউনিয়নের বিএনপির প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত হয়।