দীর্ঘ ৫৩বছরেও স্বীকৃতি পায়নি গোয়ালন্দের ২৪ শহীদ পরিবার

ষ্টাফ রিপোর্টার || ২০২৪-০৪-২০ ২০:১৯:৩৭

image

আজ ২১শে এপ্রিল রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার প্রতিরোধ যুদ্ধ ও গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকহানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ ও গণহত্যায় শহীদ হন ২৪জন বাঙালী। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি পাইনি তারা।  
 সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একাত্তরের ২১শে এপ্রিল দিনটি ছিল বুধবার। ওই দিন কাক ডাকা ভোরে আরিচাঘাট থেকে একটি গানবোট ও একটি কে-টাইপ ফেরী বোঝাই করে পাকবাহিনী প্রথমে এসে নামে পদ্মাপাড়ের গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর কামারডাঙ্গী এলাকায়। সেখান থেকে বাহাদুরপুর এলাকায় আসলে স্থানীয় জনতার সহায়তায় ইপিআর, আনছার ও মুক্তিবাহিনী হালকা অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে তাদের প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। কিন্তু পাকবাহিনীর ভারী অস্ত্রের মুখে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিরোধ ভেঙ্গে যায়। এ সময় হানাদারের বুলেটে প্রথম শহীদ হন আনসার কমান্ডার ফকীর মহিউদ্দিন। এছাড়াও শহীদ হন হাবিল মন্ডল ও ছবেদ আলী মন্ডল নামের দুই ব্যাক্তি এবং গুলিবিদ্ধ হন বেশ কয়েকজন। এরপর পাকবাহিনী পাশ্ববর্তী বালিয়াডাঙা গ্রামে ঢুকে নিরীহ গ্রামবাসীর ঘরবাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সেখানে হানাদারের বুলেটে শহীদ হন ওই গ্রামের স্বাধীনতাকামী ২৪ জন নিরীহ নারী-পুরুষ। পরবর্তীতে পাক বাহিনী গোয়ালন্দ বাজারে প্রবেশ করে আনছার ক্লাবসহ বাজারে ব্যাপক অগ্নিকান্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।   
 ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবীর মুখে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে একটি ছোট নামফলক নির্মাণ করা হয়। এটিই এখন তাদের কালের সাক্ষী। এখানে প্রতি বছর ২১শে এপ্রিল শহীদ পরিবারগুলো ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। 
 এছাড়া সম্মুখ যুদ্ধের স্থান বাহাদুরপুরে ইউসুফ আলী শেখ নামের এক ব্যক্তির দান করা জমিতে জেলা পরিষদের সহায়তায় ২০১৭ সালে একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিন্তু অর্থ সংকটে তা মাঝ পথে আটকে আছে।
 এ বিষয়ে উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, অন্যান্যদের মতো আমার পিতা জিন্দার আলী মৃধাও সেদিন হানাদার বাহিনীর বুলেটে প্রাণ হারায়। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা শহীদ পরিবারগুলো সরকারী স্বীকৃতি পাইনি।
 প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেয়া আনসার সদস্য ইয়াজ উদ্দিন শেখ বলেন, আমরা ছিলাম আনসার বাহিনীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সশস্ত্র সদস্য। সেদিন আমরা কমান্ডার ফকির মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু পাক বাহিনীর ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদের সামনে প্রতিরোধ বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। যুদ্ধে আমাদের বড় ভাই মহিউদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। পরবর্তীতে পাক সেনারা গোয়ালন্দ বাজারে এসে আমাদের আনসার ক্লাবটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। 
 তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, এই যুদ্ধে আমাদের কোন কোন আনছার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও আমিসহ আরো অনেকেই স্বীকৃতি পাননি। অথচ এখানে অনেক অমুক্তিযোদ্ধাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মান ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে।
 উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুস ছামাদ মোল্লা বলেন, ১৯৭১ সালের ২১শে এপ্রিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর প্রতিরোধ সম্মুখ যুদ্ধে আনসার সদস্য শহীদ ফকীর মহিউদ্দিন নিহত হয়েছেন। তার কোন ছেলে সন্তান নাই। সরকারের কাছে তার স্বীকৃতি দাবী করি। এছাড়া বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে যারা গণহত্যার শিকার হয়েছেন তাদের পরিবারগুলোকে শহীদ পরিবারের মর্যাদা ও সরকারী সহায়তার দাবী করছি। একই সাথে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিষয়টিও সরকারীভাবে যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে।  
 গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, পাকহানাদার বাহিনীর প্রতিরোধ  যুদ্ধে  যারা শহীদ হয়েছেন তারা যাতে শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয় সে বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এছাড়া গণহত্যায় শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভ ৭১ তৈরির কাজ চলছে। এই স্থানটি যাতে খ্যাতি পায় সে জন্য উপজেলা প্রশাসন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।

ঢাকা অফিস : ৩৪/১ ডি-২, হাটখোলা সড়ক (অভিসার সিনেমা হলের পিছনে), ঢাকা-১২০৩। ফোন অফিস : 0641-66666, বার্তা বিভাগ : 66333, রাজবাড়ী প্রেসক্লাব অফিস : 66660, বাসা : 65728, মোবাইল : 01713-489472, 01715-019375, 01715-621243, ই-মেইল : motin_rajbari@yahoo.com এবং matrikantha@gmail.com