রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষি কাজে বেড়েছে কৃষকের ব্যস্ততা। সারা বছরই কৃষকরা ব্যস্ত থাকলেও এই সময়ে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ও রসুনের আবাদ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন তারা।
আসছে শীতের বাজারের পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ করতে দিনরাত ক্ষেতে কাজ করছেন গোয়ালন্দের চাষীরা। তবে তারা বলছে, এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় শ্রমিকের মজুরি, কীটনাশকসহ সব উপকরণের দাম বেড়েছে। যার কারণে পেঁয়াজ ও রসুন আবাদে খরচ বেড়ে যাবে আগের থেকে কয়েক গুনে।
তবে তারা আশা রাখছে আবাদে বাড়তি খরচ হলেও উচ্চ ফলন হলে এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ আমদানী না হলে তারা ভালো দাম পাবে।
চলতি মৌসুমে উপজেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২২২০ হেক্টর জমিতে ‘মুড়িকাটা’ পেঁয়াজ ও ১৫৭০ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি অফিস।
সরেজমিনে গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠ ঘুড়ে দেখা যায়, চাষীরা কেউ মুড়িকাটা পেঁয়াজ ও রসুন মাঠে বুনছে।
দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাউলজানি এলাকার কৃষক হামেদ মোল্লা বলেন, গত বছরও বিঘা প্রতি এই পেঁয়াজ উৎপাদনের ব্যয় হতো ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এবারে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ থেকে ৬৫ হাজার টাকায়। বাজারে যদি ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ না ঢোকে তাহলে আমরা বিঘা প্রতি লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করতে পারবো।
উজানচর ইউনিয়নের কৃষক আইজল গায়ান বলেন, গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে বাজারের সার, কীটনাশক, গুটি পেঁয়াজের(বীজ) দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার উৎপাদন খরচ তুলনামূলক বেড়েছে। তাই আমাদের দাবী, সরকার বিদেশি পেঁয়াজ কম আমদানী করলে চাষীদের পুঁজি উঠবে।
তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া ভাল থাকলে পেঁয়াজের উৎপাদন ভাল হবে। তবে বিদেশি পেঁয়াজের আমদানী কমাতে হবে, তবেই আমরা লাভবান হবো।
ছালাম শেখ নামের আরেক পেঁয়াজ চাষী বলেন, এবার তিনি ৭ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ ও ২ বিঘা জমিতে রসুন চাষ করবেন। ৩ বিঘা পেঁয়াজ ও ১ বিঘা জমি লাগানো শেষ হয়েছে। তবে লোকসানের বিষয়টি মাথায় নিয়েই তারা চাষ করছেন। বাইরে থেকে পেঁয়াজের আমদানী বন্ধ থাকলে ভালো দাম পাবার আশা করছেন এই চাষী।
দেবগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক শুকুর প্রামানিক বলেন, ৩ বিঘা (৩৩ শতাংশে ১ বিঘা) জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করেছি। এ বছর পেঁয়াজ আবাদে প্রচুর খরচ। এক বিঘা জমিতে ৬ মণ পেঁয়াজ লাগে। এক মণ পেঁয়াজের দাম ৫ হাজার ৫ শত টাকা। আমার তিন বিঘা জমিতে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। এরপর সার, কীটনাশক, শ্রমিক খরচ দিয়ে সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২ লক্ষ টাকার উপরে খরচ হয়েছে। ঘরে তোলা পর্যন্ত আরও ১ লক্ষ টাকার উপরে খরচ হবে। ফলন ভালো হলে তিন বিঘা জমিতে ২৫০ মণ পেঁয়াজ হবে। বাজারে দাম থাকলে লাভবান হবো আশা করছি।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খোকন উজ্জামান বলেন, বর্তমানে চাষীরা মুড়িকাটা পেঁয়াজের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে। চলতি মৌসুমে উপজেলার ২২২০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ও ১৫৭০ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদ হবে বলে আমরা আশা করছি। মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ খরচ তুলনামূলক একটু বেশি হলেও অল্প সময়ে এই ফসল ঘরে তোলা যায়। বছরের এই সময়ে (শীত মৌসুমে) সারা দেশেই পেঁয়াজের ঘাটতি থাকায় মুড়িকাটার চাহিদা থাকে বেশ। এসময় ভাল দামও পায় চাষীরা। আর এই জন্যই চাষীরা বর্ষা মৌসুমের পরপরই চাষাবাদ শুরু করে মুড়িকাটা পেঁয়াজের।
ঢাকা অফিস : ৩৪/১ ডি-২, হাটখোলা সড়ক (অভিসার সিনেমা হলের পিছনে), ঢাকা-১২০৩। ফোন অফিস : 0641-66666, বার্তা বিভাগ : 66333, রাজবাড়ী প্রেসক্লাব অফিস : 66660, বাসা : 65728, মোবাইল : 01713-489472, 01715-019375, 01715-621243, ই-মেইল : motin_rajbari@yahoo.com এবং matrikantha@gmail.com