বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক জনসচেতনতামূলক কর্মসূচীর নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গতকাল ২১শে নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার চৌধুরী আব্দুল হামিদ একাডেমীতে ১০৫ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক কর্মসূচী আয়োজন করা হয়।

 এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোঃ আসিফুর রহমান। 

 এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে চৌধুরী আব্দুল হামিদ একাডেমীর প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মোঃ ছরোয়ার হোসেন, সহকারী শিক্ষক মোঃ আবু সাইদ উপস্থিত ছিলেন।

 সচেতনামূলক সভায় জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোঃ আসিফুর রহমান শিক্ষার্থীদের নিরাপদ খাদ্য আইন ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম নিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করেন। তিনি নিরাপদ খাদ্য কি ও কেনো প্রয়োজন, খাদ্য দূষক/বিপত্তি কি কি, নিরাপদ খাদ্যের প্রয়োজনে আমাদের প্রাত্যহিক চর্চাসমূহ নিয়ে ধারণা ও দিকনির্দেশনা প্রদান করেন এবং রুটি ছ্যাঁকার সময়ের সতর্কতা হিসেবে রুটি সরাসরি তাপে/চূলায় না দিয়ে তাওয়াতে সময় নিয়ে কম তাপমাত্রায় ছ্যাঁকা, নিরাপদ খাদ্য উপকরণের ব্যবহার নিশ্চিতে কালীযুক্ত কাগজের পেপার ব্যবহার না করা ও টক জাতীয় খাবার অ্যালুমিনিয়ামের/সিলভারের পাতিলে রান্না না করার পরামর্শ প্রদান করেন।

 তিনি কর্তৃপক্ষের উদ্ভাবনী সেবাসমূহ, যেমন- নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে জানতে ও অভিযোগ প্রদানে ১৬১৫৫ হটলাইন নম্বারে কল দেওয়া, রেস্টুরেন্ট-হোটেলে খাওয়ার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ-কর্তৃক গ্রেডিং প্রাপ্ত খাদ্য স্থাপনায় খাওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দেন। 

 এছাড়াও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তৈরিকৃত নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন টিভিসি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য প্রদর্শন করেন। তিনি সকলকে নিরাপদ খাদ্যদের বিষয়ে আরো বেশি সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।

 চলমান অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সচেতনতা সপ্তাহ (১৮-২৪ নভেম্বর) উপলক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি সকলকে এন্টিবায়োটিকের সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করার নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি ঔষধ ছাড়াও এন্টিবায়োটিকের অন্যান্য সোর্স যা আমাদের শরীরে অনিরাপদ প্রক্রিয়ায় আসতে পারে যেমন-মাংস, মুরগি, ডিম, দুধ, দুগ্ধদানকারী মা নিয়ে আলোচনা করেন এবং এন্টিবায়োটিক নিয়ে সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধির পরামর্শ দেন। অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স শেষ হওয়ার পর প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার, যেমন- দই, দুগ্ধজাত পণ্য, আচার, ইত্যাদি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিগুণসম্পন্ন ও ভিটামিন-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।

 খাদ্য ও ঔষধের মিথস্ক্রিয়া এড়াতে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলার, ঔষধ গ্রহণের ২-৩ ঘন্টা আগে পরে চা-কফি পান না করার, কোন খাবারের সাথে কোন ঔষধের কি কি মিথস্ক্রিয়া হয় এবং কিভাবে তা পরিহার করা যায় তা জেনে ঔষধ গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করেন।

 চৌধুরী আব্দুল হামিদ একাডেমীর সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মোঃ ছরোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের এরকম সচেতনতামূলক আয়োজন শিক্ষার্থীদের নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়াবে। অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ও খাদ্য ও ঔষধের মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কিত এই জ্ঞান আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে অনেক কাজে দিবে। আজকের এই কর্মসূচীর মাধ্যমে যে জ্ঞান অর্জন আপনারা করতে পেরেছেন তা আপনাদের পারিবারিক জীবনে কার্যকর করতে হবে পাশাপাশি আপনাদের আশেপাশে যারা এসকল বিষয়ে সচেতন নয় তাদের সচেতন করতে হবে। তাই এরকম প্রোগ্রাম আরো বেশি বেশি আয়োজনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

 অনুষ্ঠানে বিদ্যালয় ও বিদ্যালয় এলাকার আশেপাশে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি শ্রেণি থেকে ৫জন করে নিয়ে বিদ্যালয় দল গঠন করা হয়। যারা বিদ্যালয়ে প্রতিদিন ক্লাসে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে অল্প সময় কথা বলার মাধ্যমে সকল শিক্ষার্থীকে সচেতন করবেন।

 সভা শেষে শিক্ষার্থীদের মাঝে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক পারিবারিক নির্দেশিকা বই, লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ করা হয়।