বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশে একটি জবাবদিহিতার সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই বিএনপির ৩১দফা প্রণয়ন করা হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা থেকে সংস্কারের যে সকল প্রস্তাব আসছে তার প্রায় সবই এই ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে। হয়তো কোন শব্দ বা বাক্যচয়নে কিছু হেরফের রয়েছে। এখন এই ৩১ দফা বাস্তবায়ন করতে হলে দরকার একটি গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা। এজন্য তৃণমূলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে বিএনপির একজন প্রতিনিধি হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে এই ৩১ দফার দাবীগুলো তুলে ধরতে হবে।

 গতকাল ৭ই ডিসেম্বর ফরিদপুরে বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি বিষয়ক ফরিদপুর বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। বিকেল ৫টা ৩মিনিটে তিনি বক্তব্য শুরু করেন এবং শেষ করেন ৫টা ২৩ মিনিটে।

 ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে দিনব্যাপী এ কর্মশালার আয়োজন করে ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক বিভাগ।

 তারেক রহমান বলেন, ৩১ দফা জনগণের সমর্থন নেওয়া ও আস্থা অর্জন ও ধরে রাখার দায়িত্ব আমার আপনার আপনাদের সকলের। জনগণকে আস্থায় রাখতে হলে সকলকে নিয়ে কাজ করতে হবে। আপনারা সকলে যে যার অবস্থান থেকে কাজ করবেন। আপনারা প্রত্যেকে বিএনপির নেতা, অ্যামবাসেডর, বিএনপির প্রতিনিধি। বিএনপির একার আন্দোলনে স্বৈরাচার পালিয়ে যায়নি মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, সকল দল কাজ করেছে, সকল মানুষ একত্রিত হয়েছিল বলেই স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে। তবে আমাদের ওপর জনগণের আস্থা আছে বলে আমাদের ঘরে বসে থাকলে চলবে না। আমরা যদি চুপচাপ বসে থাকি তাহলে কোন কাজ হবে না। আমরা এমন কোন ভুল চিন্তা বা কাজ যেন না করি যাতে আমরা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। তাই যারা ভুল করছে তাদের বোঝাতে হবে, সতর্ক করতে হবে। সবাইকে মিলেই আমাদের কাজ করতে হবে।

 তিনি বলেন, হয়তো এক বারে আমরা পারবো না। তবে আমরা সূচনা করে যেতে চাই। পরে ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চলতে থাকলে পর্যায়ক্রমে আমরা একটা জায়গায় যাবো। এই প্রক্রিয়ার যুক্ত হতে চাইলে জনগণের সমর্থন দরকার। আমরা দেশে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। শুধু প্রধানমন্ত্রী বা এমপির জবাবদিহিতা নয়, জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে সমাজের সব পর্যায়ের মানুষের। মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান বা সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল কোন ব্যক্তি এই জবাবদিহিতার ঊর্ধে নয়।

 শেখ হাসিনার সময়ে জবাবদিহিতা ছিল না মন্তব্য করে তিনি বলেন, জবাবদিহিতা থাকলে ফরিদপুর থেকে দুই হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হতে পারতো না।

 তারেক রহমান বলেন, দেশের এমন এক অবস্থা আমরা গড়ে তুলতে চাই যেখানে চিকিৎসার জন্য দেশের মানুষকে দেশের বাইরে যেতে হবে না। ছাত্ররা শিক্ষা জীবন শেষ করে কাজ পাবে। কৃষক তার পণ্যের ন্যায্য দাম পাবে। স্বৈরাচারকে যেভাবে আমরা একতাবদ্ধ হয়ে উৎখাত করেছি তেমনি জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের একত্রে কাজ করতে হবে।

 তারেক রহমান আরও বলেন, আমাদের জনগণকে আস্থায় রাখতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে হবে, জনগণের কথায় উঠতে বসতে ও চলতে হবে। রাজনীতির মূল কথা হচ্ছে জনগণের আস্থা অর্জন করা। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে যে যে কৌশল আছে তা আমাদের করে যেতে হবে।

 বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ  ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মশালায় ৩১ দফার প্রনয়ণ কমিটির সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদি আমীন, বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক, সেলিমুজ্জামান সেলিম, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার, সহ ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক এডভোকেট নেওয়াজ হালিমা আরলী সহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।

 এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, বিএনপি নেত্রী হেলেন জেরিন খান ও মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ উপস্থিত ছিলেন।

 সভায় সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, হাসিনার অন্যায় অত্যাচার নির্যাতন জুলুমের প্রতিবাদ হচ্ছে বিএনপির এই ৩১ দফা। এটি একটি মানবিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রগঠণের বুকলেট।

 ইসমাইল জবিউল্লাহ বলেন, হাসিনা মুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশের বুকের উপরে জগদ্দল পাথর হয়ে বসে থাকা পাথর সড়ে গেলেও বাংলাদেশ বিপদ মুক্ত নয়। গত চার মাসের অভিজ্ঞতা বলে এখনও হাসিনার প্রেতাত্মারা সক্রিয় রয়েছে। তারা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এ ষড়যন্ত্র দেশের বিরুদ্ধে এ ষড়যন্ত্র বিএনপির বিরুদ্ধে।

 তিনি বলেন, দেশে বিদেশে নানা শক্তি সক্রিয় রয়েছে। হাসিনার লুটেরা বাহিনী কাজ করছে। হাসিনা প্রতিবেশি একটি দেশে বসে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। তারা আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে কলকাতা ও আগরতলায় আমাদের ডেপুটি হাইকমিশনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমাদের জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়েছে।

 ইসমাইল জবিউল্লাহ বলেন, হাইকমিশনে হামলা জেনেভা কনভেশন পরিপন্থী। এর অর্থ আমাদের টেরিটরিতে ঢুকে গিয়ে হামলা করা। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। 

 এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ বিভাগীয় কর্মশালা শুরু হয়। এই অনুষ্ঠানে ফরিদপুর জেলা ছাড়াও রাজবাড়ী মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জের বিএনপির নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। কর্মশালায় বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ তারেক রহমানকে নানা রকম প্রশ্ন করেন এবং তারেক রহমান সে সব প্রশ্নের জবাব দেন।