রাজবাড়ীতে স্বল্প মূল্যে চোখসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দিচ্ছে জীবনতরী ভাসমান হাসপাতাল

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/সুজন কুমার বিষ্ণু || ২০২৫-০৪-২৬ ১৫:৪৪:৫৬

image

রাজবাড়ীতে অস্বচ্ছল, দরিদ্র ও নদী পাড়ের মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে পদ্মা নদীতে অবস্থান করছে “ইম্প্যাক্ট জীবনতরী ভাসমান হাসপাতাল”। আর ভাসমান এই হাসপাতালটি এখন মানুষের ভরসার স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বল্প খরচে উন্নত চিকিৎসা সেবা পেতে প্রতিদিন শত শত রোগী এই হাসপাতালে সেবা নিতে আসছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার সোনাকান্দর গ্রামে মৌলভী ঘাট এলাকায় এই ইম্প্যাক্ট জীবনতরী ভাসমান হাসপাতালে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বল্প খরচে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে। ইতোমধ্যে জীবনতরীর চিকিৎসা সবার মধ্যে সাড়া ফেলেছে।
গতকাল ২৬শে এপ্রিল দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, সোনাকান্দর (মৌলভী ঘাট) এলাকায় ইম্প্যাক্ট জীবনতরী ভাসমান হাসপাতালটি পদ্মা নদীর মৌলভীর ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়েছে। এই হাসপাতালটি ৩তলা বিশিষ্ট। নদীর পাড়ে রয়েছে টিকিট কাউন্টার। এখান থেকে টিকিট সংগ্রহ করে রোগীরা যাচ্ছে চিকিৎসা সেবা নিতে। হাসপাতালটিতে শুক্রবার ব্যতিত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত রোগী দেখেন চিকিৎসকরা।  ইম্পাক্ট জীবন তৈরী ভাসমান হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে এই হাসপাতালের ভেতরে অন্য হাসপাতালের মতো এখানে স্বল্প পরিসরে সবই আছে। হাসপাতালের ভিতরের বা পাশে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার জায়গা। ডান পাশে চিকিৎসকের চেম্বার, প্যাথলজি ও এক্স-রে করার কক্ষ। দ্বিতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটার ও রোগী থাকার বেড। তৃতীয় তলায় একপাশে ট্রেনিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার ও অন্যপাশে ফাঁকা। ছাদের ওপরে টিনের ছাউনি দেওয়া।
 নূন্যতম টাকার বিনিময়ে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষ ও রাজবাড়ী জেলাসহ আশেপাশের জেলার মানুষদেরকে। মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারছেন রোগীরা। হাসপাতালে প্রতিদিনই স্বাস্থ্যসেবা নিতে ভিড় করছে শত শত মানুষ। স্বল্প টাকায় হাতের কাছে উন্নত চিকিৎসা পেয়ে খুশি তারা। 
 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইম্প্যাক্ট জীবন তরী ভাসমান হাসপাতালে নাক-কান গলা ও চোখের অপারশেন, জন্মগত মুগুর পা, ঠোঁটকাটা, হাত-পা বাকা, ভাঙা অঙ্গের চিকিৎসা, মাজা ব্যথা ও মাথা ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
 ভাসমান এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোকসানা বলেন, আমার চোখের সমস্যা ছিল। বেশ কয়েক জায়গায় চিকিৎসা নিয়েছি কিন্তু পুরোপুরি ভালো হয়নি। কিছুদিন আগে ভাসমান এই হাসপাতালে দেখিয়েছিলাম আজ আবার এসেছি। আমার চোখের সমস্যা আগের থেকে অনেকটা ভালো। মাত্র ৫০ টাকায় চিকিৎসা সেবা নিয়েছি। 
 শরিফুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, আমি জানতে পেরে বাবা ও মাকে নিয়ে এসেছি। ৫০ টাকায় টিকিট নিয়ে তাদের দেখালাম। যা অন্য বেসরকারী ক্লিনিকে দেখাতে গেলে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা ডক্টরের ভিজিট দিতে হতো। এখান থেকে দুইটি পরীক্ষা করিয়েছি একদম স্বল্প মূল্যে। এই প্রথম দেখালাম। ডক্টরদের ব্যবহারও অনেক ভালো। 
 ইম্প্যাক্ট জীবনতরী ভাসমান হাসপাতালের প্রশাসক এ কে এম শহিদুল হক বলেন, মানবতার সেবা দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। নদ নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ বেশিরভাগই তুলনামূলক দরিদ্র হয়। তাদের পক্ষে বেশি টাকা খরচ করে শহরে গিয়ে আধুনিক চিকিৎসা নেওয়া কঠিন, তাই তাদের সুবিধার্থে আমরা স্বল্প মূল্য চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছি। 
 হাসপাতালটিতে স্বল্পমূল্যে চক্ষু রোগের চিকিৎসা ও ছানি অপারেশন করা হয়। রোগীর চাহিদা অনুযায়ী লেন্স সংযোজন ও ফ্যাকো সার্জারির ব্যবস্থা আছে। এই হাসপাতালে নাক-কান-গলা রোগের চিকিৎসা ও অপারেশন করা হয়। এছাড়া জন্মগত মুগুর-পা, বাঁকা-পা, ঠোটকাটা, তালুকাটা রোগের অপারেশন করা হয়। অর্থোপেডিক সমস্যাজনিত শারীরিক ব্যথা, মাজা ব্যাথা, মাথা ব্যাথাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা হয়। হাসপাতালে ৩জন মেডিকেল অফিসার, ৩জন নার্স, ৭জন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টসহ মোট ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ২৪ ঘন্টা থাকে। এছাড়াও জরুরী রোগীদের জন একটি এ্যাম্বুলেন্স সবসময় প্রস্তুত থাকে। হাসপাতালটি ১২ শয্যার। 
 তিনি আরো বলেন, রাজবাড়ীর এই সোনাকান্দরে গত ৩মাসে আমরা প্রায় ১০ হাজার রোগীকে এই পর্যন্ত সেবা দিয়েছি। গত ১৮ই জানুয়ারী থেকে আমরা এখানে সেবা দিচ্ছি। প্রথমে রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও এখন প্রতিদিন ১শত এর বেশী রোগীকে সেবা দিচ্ছি। রাজবাড়ীসহ পাবনা, সুনামগঞ্জ, মাদারীপুর বরিশাল থেকেও সেবা নিতে আসছে রোগীরা। 

ঢাকা অফিস : ৩৪/১ ডি-২, হাটখোলা সড়ক (অভিসার সিনেমা হলের পিছনে), ঢাকা-১২০৩। ফোন অফিস : 0641-66666, বার্তা বিভাগ : 66333, রাজবাড়ী প্রেসক্লাব অফিস : 66660, বাসা : 65728, মোবাইল : 01713-489472, 01715-019375, 01715-621243, ই-মেইল : motin_rajbari@yahoo.com এবং matrikantha@gmail.com