ঢাকা বুধবার, মে ২২, ২০২৪
বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে রাজবাড়ীতে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে তরুণীর আত্মহত্যা
  • মীর সামসুজ্জামান সৌরভ
  • ২০২৪-০৪-৩০ ১৮:৪০:৫৯

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় চান্স না পেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে রাজবাড়ী শহরের সন্নিকটে পদ্মা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এক তরুণী।
 গতকাল ৩০শে এপ্রিল সন্ধ্যায় রাজবাড়ী শহরের গোদার বাজার পদ্মা নদী এলাকায় ঝাঁপ দিয়ে সে আত্মহত্যা করে। পরে তাকে রাজবাড়ী জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
 নিহত ওই তরুণীর নাম পিউ কর্মকার(২০)। সে রাজবাড়ী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড বিনোদপুর গ্রামের কৃষ্ণপদ কর্মকারের মেয়ে। পিউ রাজবাড়ী সরকারী কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এ বছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলো।
 আত্মহত্যা করার আগে পিউ কর্মকার তার ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে হুবাহু তুলে ধরা হলো ঃ গুচ্ছ আমার শেষ ভরাসা ছিলো। জানিনা কবে রেজাল্ট দিবে। পরীক্ষাও মোটামুটি হয়েছিলো একটা আশা ছিলো কিন্তু আমার ভাগ্য সেই আশাটাও পূরণ করতে দিলো না। ৫টা অপশন থাকে তার মধ্যে আমি বায়োলজি ও ইংরেজির বৃত্ত ভরাট করে ফেলেছিলাম ভূল করে আজকে সেটা দেখলাম। কিন্তু আমি উত্তর করেছিলাম বাংলা এর। আমার সব স্বপ্ন শেষ। একে একে ঢাবি, রাবি, জাবি, একটু একটুর জন্য ধাক্কা খায়। জানি এটাও আমার ভাগ্যের জন্য চেষ্টা আমার কম ছিলোনা। সারা দিন রাত এক করে পড়তাম। বাবা মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিলো আমাকে নিয়ে কিন্তু আমি কিচ্ছু দিতে পারিনাই। দাদার ইচ্ছা ছিলো আমাকে ডাক্তার বানাবে। আমারও স্বপ্ন ছিলো ছোট থেকেই যে ডাক্তার হবো। আমার ভাগ্য এতটাই খারাপ ছিলো যে মেডিকেলে এডমিশন এর প্রিপারেশন নেওয়ায় শুরু করি কিন্তু মেডিকেলেও বসতে পারিনাই। কিন্তু এটা থেকেও বিশাল ধাক্কা খাই। অনেক ভেঙে পড়েছিলাম তাও হাল ছাড়িনাই। এই এডমিশন পিরিয়ডটা যে কতটা কষ্ট দিচ্ছে আমাকে। এই সব আমি আর নিতে পাড়তেছিনা। আমি শুধু একটা আশ্রয় খুঁজতে ছিলাম শেষ আশ্রয় এটাও শেষ হলো। অনেক মানুষ অনেক আত্মীয়র অনেক কথা শোনা লাগছে। বাবার একটু ফিনান্সিয়াল সমস্যা ছিলো এজন্য যে ঢাকা গিয়ে পড়তে হবে কেন। কিন্তু আমি ধৈর্য ধরে ছিলাম যে পারবো। কিন্তু আমি আর পারলাম না। সারাটাদিন ঘরের মধ্যে একা একা বসে থাকি। মানুষের কত ফ্রেন্ড কত কিছু কিন্তু আমি আমার পাশে কাউকে পাইনাই। হয়তো আমাকে সাপোর্ট করার মতন কেউ থাকলে আজকে এই মৃত্যু আমার হতো না। সেকন্ড টাইম এর পিপারেশন নেওয়ারও আমার কোন মানসিক ও শারিরীক কোন শক্তি নেই। আমার জীবনটা এখানেই থেমে গেলো। মার কাছে যাইয়ে মাঝে মধ্যে কাদি মাও বুঝে নাই আমাকে। আমি একটা বোঝা সবার কাছে। আমার মৃত্যুর জন্য আমার এই বড় বড় স্বপ্নগুলোই দায়ী। আমি আমার বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারি নাই। আমাকে শেষ বারের মতন দেখতে চাইলে নদীর জলেই খুঁজো। আমার মৃত্যুটা এভাবেও চাই নাই। ভালো থাইকো সবই। আমি আমার এই জীবনটা আর নিতে পারতেছিনা। আমারে মাফ করে দিও সবাই। এভাবে দম বন্ধ করে বাঁচতে পারতেছিনা আর।
 পিউ কর্মকারের কয়েকজন সহপাঠী জানান বলেন, পিউ এইচএসসি পরীক্ষার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলো। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় সে একটি বিশ্ববিদ্যালয়েও সুযোগ পাইনি। এছাড়াও গুচ্ছ কলেজে ভর্তি পরীক্ষাতেও সে কোন কলেজে ভর্তি হবার সুযোগ পাইনি। যে কারণে সে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিল। কিন্তু সে বিষয়টি এই পর্যায়ে নিয়ে যাবে আমরা ভাবিনি।
 রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মেডিকেল অফিসার ডাঃ সাইফুল বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
 এ বিষয়ে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোঃ ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জানতে পেরেছি পিউ কর্মকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলো। সে ডিপ্রেশনে ভুগছিলো। তাই সে তার নিজ ফেসবুক একাউন্টে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তার মরদেহ রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান নওয়াব  আলী॥ভাইস চেয়ারম্যান রাজু ও লুৎফন নাহার
রাজবাড়ীতে নির্বাচনের কেন্দ্র পরিদর্শনে ডিসি-এসপি
রাজবাড়ীতে বিএনপির নেতা আফছার সরদারের ইন্তেকাল
সর্বশেষ সংবাদ