ভাল বেতনে চাকুরীর আশ্বাস দিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে নির্যাতনের পর আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আলাদিপুর ২নং কলোনীর গ্রামের প্রবাসী ফজলু বেপারীর বিরুদ্ধে। তার খপ্পড়ে পরে ভূক্তভোগীর শিকার হয়েছেন অনেকেই। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পাচ্ছেন না কেউ। তবে সম্প্রতি তার ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা হলে ফজলুর বর্বরতার কাহিনী প্রকাশ্যে আসে।
জানা যায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামের ইছাক মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে নানা প্রলোভনে বিদেশে নিয়ে জিম্মি করে তার পরিবারের কাছ থেকে কয়েক দফায় ১৫ লক্ষ টাকা আদায় করে নিয়েছে দালাল চক্রের হোতা ফজলু। এ ঘটনায় ওই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে মামলা হলে ফজলুর স্ত্রী কুলসুম ওরফে পোলো পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। তবে ওই নারীর জামিন না হলে ইছাককে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দিচ্ছেন দালাল চক্র। এমন ঘটনায় আতংকের মধ্যে দিনপাড় করছে পরিবারটি।
নির্যাতনের শিকার ইছাক মিয়ার মা জোহরা বেগম বলেন, একই উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আলাদিপুর ২নং কলোনীর গ্রামের ফজলু বেপারী লিবিয়াতে ভাল বেতনে চাকুরী দেয়ার জন্য আমার ছেলে ইছাককে নানা প্রলোভন দেখায়। আমার ছেলে তার কথায় প্রলোভিত হয়ে লিবিয়াতে যাওয়ার জন্য রাজী হয়। ফজলু বেপারীও লিবিয়াতে থাকে। চলতি বছরের গত ১৫ই মার্চ ফজলুর কথামতো তার স্ত্রী কুলসুম ও মেয়ে রিতা আমার বাড়ীতে আসলে তাদের কাছে বিদেশ যাওয়া বাবদ ৪লক্ষ টাকা তুলে দিই। ২১শে মার্চ তারা আমার ছেলেকে লিবিয়াতে পাঠিয়ে দেন। লিবিয়া যাওয়ার এক মাস পরেই ফজলু তার সহযোগীদের সহায়তায় আমার ছেলে ইছাককে নির্যাতন করে ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে। এরপর সে মোবাইলে ইমোতে কল করে ৩লক্ষ টাকা পাঠাতে বলেন। তিনি ফজলুর স্ত্রী ও মেয়ের কাছে গত ৯ই জুন ৩লক্ষ টাকা দেন। এর কিছু দিন পর ইছাকের শরীরে নির্যাতনের দাগ দেখিয়ে তারা আবারো ৪ লক্ষ টাকা দাবী করে। না হলে তারা ইছাককে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। ফলে তিনি নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন উপায়ে টাকা সংগ্রহ করে ৪ লক্ষ টাকা প্রদান করেন। এতো টাকা পাঠানোর পরেও তারা আমার ছেলেকে মুক্তি দেয়নি। গত ২০শে সেপ্টেম্বর ফজলু ইমোতে আরো ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা পাঠাতে বলেন। টাকা পাঠাতে মিস হলে ইছাককেও মিস করবেন বলে হুমকি দেয়া হয়। গত ২১শে সেপ্টেম্বর তার কথা মতো ইসলামী ব্যাংক সোনাইমুরী নোয়াখালী শাখায় রেজাউল হক চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির ব্যাংক একাউন্টে ওই টাকা পাঠানো হয়। এছাড়া বিকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে আরো টাকা পাঠান জোহরা বেগম।
জোহরা বেগম বলেন, এভাবে আমার কাছ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা আদায় করে দালাল চক্র। এরপরেও দালাল চক্র আমার ছেলেকে মুক্তি দেয়নি। সে এখন কোথায় আছে, কিভাবে আছে তাও তিনি জানেন না। ফলে নিরুপায় গত ১৪ই নভেম্বর রাজবাড়ীর মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইবুনালে ফজলু, কুলসুম ও রিতাকে আসামী করে মামলা করেন ইছাক মিয়ার স্ত্রী আমেনা বেগম।
তিনি আরো জানান, ফজলু এভাবে অনেককে বিদেশে নিয়ে জিম্মি করে টাকা আদায় করেছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছেন না কেউ।
এদিকে স্বামীর ওপর নির্যাতনের খবর শুনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ইছাকের স্ত্রী আমেনা বেগম। ছোট ছোট ৪ সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। অসুস্থতার জন্য প্রতিবেদকের সাথে ঠিক মতো কথা বলতে না পারলেও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী করেন আমেনা বেগম।
ইছাক মিয়ার ছোট ভাই ইউনুস মিয়া বলেন, আমার ভাবীর দায়েরকৃত মামলায় গত ১৬নভেম্বর ফজলুর স্ত্রী কুলসুম গ্রেফতার হলে ফজলু ও তার সহযোগিরা বিভিন্ন সময়ে আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছে। তার স্ত্রীকে যদি জামিন না করানো হয় তাহলে তারা আমার ভাইকে মেরে ফেলবে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা আতংকের মধ্যে দিনপাড় করছি।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজবাড়ী থানার এসআই মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, মামলার এজাহারভূক্ত ২নং আসামী কুলসুম ওরফে পোলো (৩৫)কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মূল আসামী বিদেশে থাকায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রবাসী কল্যাণ শাখার সহকারী কমিশনার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বাবু বলেন, ভূক্তভোগী পরিবাররা যদি সমস্যার কথা উল্লেখ করে আমাদের কাছে লিখিতভাবে, ফোনে অথবা ইমেইলের মাধ্যমে অভিযোগ করেন আমরা সার্বক্ষণিক তার পাশে থাকবো। প্রথমে আমরা নিজেরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। যদি না পারি সেক্ষেত্রে আমরা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে কথা বলে যেভাবে সহযোগিতা করার দরকার সে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা করবো।