রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ২৪শে নভেম্বর সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস পালন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খানের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোঃ মাহাবুর রহমান শেখের সঞ্চালনায় সভায় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ ইমদাদুল হক বিশ্বাস, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মার্জিয়া সুলতানা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মুহাম্মদ আব্দুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার(পাংশা সার্কেল) সুমন কুমার সাহা, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার, রাজবাড়ী সরকারী কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ফকরুজ্জামান মুকুট, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল হোসেন, যুদ্ধকালীন কমান্ডার ডাঃ কামরুল হাসান লালী, যুদ্ধকালীন কমান্ডার বাকাউল আবুল হাসেম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসীন উদ্দিন বতু, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ আহমেদ, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম সফি, জেলা জাসদের সভাপতি মুনিরুল হক মুনির, এনজিও রাসের নির্বাহী পরিচালক লুৎফর রহমান লাবু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধেন সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক প্রতিবারের ন্যায় এবারও রাজবাড়ীতে যথাযথ মর্যাদায় আগামী ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস পালন করা হবে। রাজবাড়ীতে যাতে সকলের অংশগ্রহণে সরকার নির্দেশিত ও স্থানীয়ভাবে গৃহীত সকল কর্মসূচী যথাযথ মর্যাদার সাথে সম্পন্ন করা যায় সেই লক্ষ্যে জেলার বিভিন্ন সরকারী বিভাগ, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক-সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এই প্রস্তুতিমূলক সভা করা হচ্ছে। বিগত বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস রাজবাড়ীতে কীভাবে পালিত হয়েছে, এবার কীভাবে পালন করা হবে এবং সরকারী নির্দেশনা কী রয়েছে সেগুলো নিয়ে সকলের মতামতের ভিত্তিতে একটি প্রাথমিক কর্মসূচী চূড়ান্ত করা হয়েছে। কোনো কারণে সমস্যা হলে কর্মসূচী বাস্তবায়নে গঠিত উপ-কমিটি আলোচনার মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান করবে। আশা করি সকলের অংশগ্রহণে রাজবাড়ীতে মহান বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালন করা সম্ভব হবে।
সভায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবসের সম্ভাব্য কর্মসূচীর মধ্যে ১৪ই নভেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচীর শুরুতে সকাল ১০টায় লোকোশেসডস্থ বদ্ধভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ, সন্ধ্যায় একই স্থানে মোমবাতি প্রজ্বালন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান; ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের প্রত্যুষে রাজবাড়ী পুলিশ লাইন্সে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা, সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারী/আধা-সরকারী/স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারী ভবন/স্থাপনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন (সরকারী নীতিমালা মেনে), সকাল ৭টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্যে, শ্রীপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও রাজবাড়ী রেলগেটের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে, লোকোশেড বধ্যভূমিতে, মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রফিক, সফিক, সাদিক ও আঃ আজিজ খুশি’র কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ, পৌনে ৮টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় সঙ্গীতের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, আনসার ভিডিপি, বিএনসিসি, সরকারী শিশু পরিবার, কলেজ, মাদ্রাসা ও ও বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, রোভার স্কাউট, বয়েজ স্কাউট, গার্লস গাইড, কাবস্, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে সমাবেশ, কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রদর্শন এবং পুরস্কার বিতরণ, দুপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান, বিকাল ৩টায় রাজবাড়ী অফিসার্স ক্লাব প্রাঙ্গণে মহিলাদের অংশগ্রহণে আলোচনা সভা ও প্রীতি খেলাধুলা, বিকাল সাড়ে ৩টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে দাঁড়িয়াবাধা ও প্রীতি ফুটবল খেলা, সন্ধ্যায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানের মঞ্চে মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া জেলার সকল মসজিদে ১৪ ডিসেম্বর সুবিধাজনক সময়ে ও ১৬ই ডিসেম্বর বাদ যোহর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ সকল বুদ্ধিজীবী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ মোনাজাত, অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে তাদের সুবিধাজনক সময়ে বিশেষ প্রার্থনা, জেলা কারাগার, হাসপাতাল ও এতিমখানায় বিজয় দিবসের দিন উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। এর পাশাপাশি সিভিল সার্জন অফিস কর্তৃক স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী ও জেলা তথ্য অফিস কর্তৃক জেলার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী এবং শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সরকারী/বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।