ঢাকা সোমবার, মে ৬, ২০২৪
বালিয়াকান্দিতে কোন কাজে আসছে না সাড়ে ৩৬ লাখ টাকার পুনঃখনন পুকুর
  • সোহেল মিয়া
  • ২০২৩-০৫-২৬ ১৫:৪০:৫১

পানি সংরক্ষণ ও নিরাপদ পানি সরবরাহের উদ্দেশ্যে সাড়ে ৩৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দিতে ৪টি পুকুর পুনঃখনন সাধারণ মানুষের কোন কাজে আসছে না। নজরদারী ও দায়িত্বহীনতার কারণে এসব পুকুরের পানি দুষিত এবং কচুরীপানা আর আবর্জনায় ভরে গেছে। এ অবস্থায় প্রকল্পের উদ্দেশ্যে ও কার্যকারিতা নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয়দের মাঝে। তাদের মতে পুকুর পুনঃখননের সাড়ে ৩৬ লাখ টাকাই যেন জলে গেছে। ফলে যে উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ সেটা একেবারেই ভেস্তে গেছে। তবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্তারা বলছেন, বর্তমানে এমন মনে হলেও আগামীতে এটি কাজে লাগবে।

  জানা গেছে, পানি সংরক্ষণ ও নিরাপদ পানি সরবরাহের উদ্দেশ্যে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দিতে চারটি পুকুর পুনঃখননের প্রকল্প গ্রহণ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। আর এ জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩৬ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৪ টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ করে সংশ্লিষ্টরা। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যে ছিল যেসব এলাকার পানিতে লবণাক্ত রয়েছে, সেসব এলাকার মানুষের সুপেয় পানি সরবরাহ করা। পুকুরের গভীরে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে বিশেষ করে চৈত্র-বৈশাখের সময় পানির স্তর ঠিক রাখা এবং ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমাতে উপরিভাগের পানি ব্যবহারে এলাকার মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা।

  স্থানীয় জনস্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে বালিয়াকান্দি উপজেলায় চারটি পুকুর পুনঃখননের প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের পুকুরগুলোর মধ্যে জঙ্গল ও জামালপুর ইউনিয়নে একটি করে এবং নবাবপুর ইউনিয়নে দুটি রয়েছে। এরমধ্যে প্যাকেজ-রাজ-৫৪ এর আওতায় জঙ্গল ও জামালপুর ইউনিয়নে দুটি পুকুর পুনঃখনন করা হয়। ২০২০ সালের ৬ই আগস্টে পুকুর খনন কাজ সমাপ্ত হয়। প্রতিটি পুকুর খনন বাবদ খরচ ধরা হয় ১২ লাখ ২৮ হাজার ৭৭৫ টাকা। আর প্যাকেজ-রাজ-১০৩-১ এর আওতায় নবাবপুর ইউনিয়নে দুটি পুকুর পুনঃখনন করা হয়। এই দুটি পুকুরের খনন বাবদ খরচ ধরা হয় ৫ লাখ ৫০ হাজার ৯৭৭ টাকা করে। পুকুর দুটির খনন কাজ সম্পন্ন হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরের ১৫ তারিখে। চারটি পুকুর খনন বাবদ খরচ হয় ৩৬ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৪ টাকা।

  খননের পর জেলা পরিষদের পরিদর্শনকারী দল পুকুর বুঝে নেন। জেলা পরিষদের গঠিত কমিটি পুকুরগুলোর দেখভাল করার কথা থাকলেও কোন নজরদারী নেই তাদের। ফলে যে উদ্দেশ্যে পুকুরগুলো পুনঃখনন করা হয়েছিল তা সফল হয়নি একটওু। প্রকল্পের এসব পুকুরে পানি সুপেয় রাখতে মাছ চাষ সর্ম্পূণ নিষিদ্ধ বলা থাকলেও জেলা পরিষদ উল্টো পুকুরগুলো লীজ প্রদান করেছে প্রভাবশালীদের কাছে। আর লীজ নিয়ে অবাধে চলছে মাছ চাষ।

  সরেজমিন নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামের দোপপাড়ার পুকুরে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরটি শুকিয়ে গেছে। মাঝখানে কোন রকম হাটু পানি রয়েছে। তদারকির অভাবে পুকুরের চারপাশের কাটাতারের বেড়া ও পিলার ভেঙে পড়ে আছে। পুকুরটি স্কুল শিক্ষক আবুল কালাম মন্ডল লীজ নিয়ে মাছ চাষ করছেন। তিনি জানান, পুকুরটি খননের পর প্রথম দুই বছর এভাবে পড়ে ছিল। কেউ ব্যবহার করতো না। পরে আমি ২০২৩ এ জেলা পরিষদ থেকে লীজ নিয়ে মাছ চাষ করছি।

  জামালপুরের তুলসী বরাট গ্রামের পুকুরটি কচুরীপানা ও আবর্জনায় ভরা। পুকুরের পাশের বাসিন্দা শংকরী বিশ^াস বলেন, পুকুরটি শুধু শুধু খনন করা হয়েছে। এটি আমাদের কোন কাজেই আসছেনা। বারো মাস কচুরীপনায় ভরে থাকে। পাটের সময় পুকুরের মধ্যে পাট জাগ দেওয়া হয়। যেখানে পাট জাগ দেওয়া হয় সেখানে কতটুকু সুপেয় থাকতে পারে পানি?

  জঙ্গল ইউনিয়নের পুকুরটির অবস্থা আরো শোচনীয়। পুকুরটি এখন আর কেউ ব্যবহারই করছেন না বলে জানান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কল্লোল বসু। 

  তিনি বলেন, তদারকির অভাবে পুকুরটি এখন পরিত্যক্ত। যে উদ্দেশ্য নিয়ে খনন করা হয়েছিল তা একটওু সফল হয়নি। এখানে লাখ লাখ টাকাই জলে গিয়েছে। 

  জেলা পরিষদের বালিয়াকান্দিতে দায়িত্বরত সদস্য মোঃ আব্দুল বারিক বিশ^াস বলেন, পুকুরগুলো ২০২০ সালের শেষের দিকে খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৩ সালে আমি ও পরিষদের চেয়ারম্যান দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। বিষয়টি দ্রুত খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দুটি পুকুর লীজ দেওয়া হয়েছে বলে আমি জানতে পেরেছি।

  উপজেলা জনস্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী মোঃ রেজাউল করিম বলেন, প্রথমত পুকুরগুলো সরকারের দখলে ছিল না। পুনঃখননের মাধ্যমে দখলে চলে আসে। যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে এটি একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। অদূর ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় রেখে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ হয়ত এটির উপকারিতা চোখে পড়ছেনা। কিন্তু ৫০ বছর পর যখন পানির স্তর নিচে নেমে যাবে তখন এই পুকুরগুলো মানুষের ভীষণ কাজে লাগবে।

ফরিদপুর রেল স্টেশনে চন্দনা কমিউটার ট্রেনের স্টপেজ দাবীতে অবস্থান কর্মসূচি
আগামী দুই মাসের মধ্যে ভাঙ্গা-খুলনা-যশোর পর্যন্ত ট্রেন চালু হবে ঃ রেলপথ মন্ত্রী মোঃ জিল্লুল হাকিম
বসন্তপুরে ইমাম কমিটির উদ্যোগে খাবার স্যালাইন ও শরবত বিতরণ
সর্বশেষ সংবাদ