ঢাকা রবিবার, মে ৫, ২০২৪
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের অধিকাংশ ফেরী ফিটনেস বিহীন
  • স্টাফ রিপোর্টার
  • ২০২৪-০১-২১ ১৩:৪৮:১৫

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার খ্যাত রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুট দক্ষিণবঙ্গের মানুষ সহজে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের যাতায়াতের ব্যবহার করে থাকে। এই নৌরুট দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন ও যাত্রী পারাপার হয়ে থাকে।

 পদ্মা সেতু চালু হবার আগে এই নৌরুটের যে পরিমাণে চাপ ছিল পদ্মা সেতু চালু হবার পর সেই চাপ না থাকলেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলা সহজে রাজধানীতে যাতায়াতের জন্য এই রুট ব্যবহার করে থাকে। তবে এই নৌরুটে চলাচলকারী বেশিরভাগ ফেরীই ফিটনেস বিহীন এবং দীর্ঘ কয়েক বছরের পুরোনো ফেরী। যার ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা ধরনের নৌ দুর্ঘটনা।

 দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলাচলকারী অধিকাংশ ফেরীর ফিটনেস নেই। আবার কুয়াশার মধ্যে ফেরী চলাচলের জন্য ৫ কোটি টাকা খরচ করে যেসব ফগ লাইট বসানো হয়েছিল, সেটিও বিকল হয়ে পড়ে আছে। এসব কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট প্রায়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।

 গত বুধবার সকালে কুয়াশায় আটকে থাকা ছোট ইউটিলিটি ফেরী রজনীগন্ধার তলা ফেটে পানি উঠে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরী ঘাটের অদূরে ৯টি ট্রাক নিয়ে ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া রজনীগন্ধা ফেরীটিরও ফিটনেস ছিল না বলে ফেরীতে থাকা ট্রাকের চালক ও হেলপাররা অভিযোগ করেছেন।

 এর আগে, ২০২১ সালের ২৭শে অক্টোবর ‘আমানত শাহ’ নামের একটি ফেরী ১৪টি যানবাহন নিয়ে পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরী ঘাটের পল্টুনের কাছে ডুবে যায়। সেই ফেরীও ফিটনেস বিহীন ছিল। ফেরীটি প্রায় ৪১বছরের পুরাতন ছিল। সর্বশেষ ২০১২ সালে ডকিং মেরামত হয়েছিল আমানত শাহ ফেরীটির। এরপর থেকে কোনো ফুল ডকিং করা হয়নি। এছাড়া কোনো সার্ভে সার্টিফিকেট ছিলও না ফেরীর। ফলে ফেরীটি চলাচলের অনুপযুক্ত ছিল। 

 জানা গেছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের অধিকাংশ ফেরীর বয়স ৩৫ বছরের বেশি। রজনীগন্ধার বয়স ছিল ৪৭ বছরের বেশি। রো-রো ফেরী ‘খান জাহান আলী’ তৈরি হয় ১৯৮৭ সালে। আরেক রোরো ফেরী ‘কেরামত আলী’ ৩৬ বছরের পুরনো। ‘বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর’ ফেরী তৈরি হয় ১৯৯২ সালে।

 বিআইডব্লিউটিসির একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিসির আওতাধীন ৫৩ ফেরীর মধ্যে ৪৭টিরই সনদ নেই। বেশির ভাগই এসব ফেরীর ৪০ বছরের বেশি পুরাতন। এছাড়াও ১৮টি রো রো ফেরীর (বড় ফেরী) মধ্যে ১৪টিরই ফিটনেস সনদ নেই। এছাড়াও নেই বেশির ভাগ ফেরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি। অনেক ফেরীর বয়স ৪০ বছর পার হয়ে গেছে। আইন অনুযায়ী ৪০ বছরের বেশি বয়সী নৌযানের ফিটনেস সনদ দেয় না বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর। তার পরেও চলছে ফেরী সার্ভিস। ঘটছে দুর্ঘটনা।

 বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি ফেরীতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ফগ লাইট বসানো হয়। একেকটি ৭ হাজার কিলোওয়াটের লাইট কিনতে ৫০ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়। বলা হয়েছিল, এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। অথচ কয়েক দিন পরই অধিকাংশ লাইট নষ্ট হয়ে যায়। 

 জানা গেছে, নৌরুটের খান জাহান আলী, শাহ আলী,  কেরামত আলী, ভাষা শহীদ বরকত, কপোতি, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন, বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর, শাহ আমানত ও শাহ পরান ফেরীতে ফগ অ্যান্ড সার্চ লাইট বসানো হয়। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ছোট-বড় ১৬টি ফেরী চলাচল করে। এসব ফেরীতে ১৭ থেকে ১৮শ যানবাহন পারাপার হয়। কিন্তু কুয়াশার কারণে প্রতিদিনই তিন থেকে ৯ ঘন্টা পর্যন্ত ফেরী চলাচল বন্ধ থাকছে।

 কয়েকজন ফেরী চালক জানান, প্রতিটি ফেরীর বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। নাব্যতা সংকটের কারণে ধীরে ধীরে চললেও কুয়াশার কারণে প্রতিদিনই ৬ থেকে ৯ ঘন্টা ফেরী বন্ধ রাখতে হয়। ফগ লাইট লাগানো হলেও তা কাজে আসেনি। নদীপথ অস্পষ্ট হয়ে গেলেই ফেরী বন্ধ করে দেয় ঘাট কর্তৃপক্ষ। অথচ কোটি টাকা খরচ করে এই কুয়াশার কারণে ফেরীতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পূর্ণ ফগ লাইট লাগানো হয়েছিলো যা কোন কাজেই আসছে না।

 দুর্ঘটনার দিন রজনীগন্ধার আরোহী ছিলেন ট্রাক চালক আশিক। তিনি বলেন, ফেরীটির কোনো নৌযানের সঙ্গে ধাক্কা লাগেনি। তলা দিয়ে পানি ঢুকে কাত হয়ে ৯টি ট্রাক নিয়ে ফেরীটি ডুবে যায়। ফেরীটি অনেক পুরাতন ও ফিটনেস বিহীন ছিলো। এছাড়াও ফেরী কর্তৃপক্ষ অবহেলার কারণে রজনীগন্ধা ফেরীটি ডুবে যায়।

 বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা কার্যালয়ের উপ-মহা ব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ বলেন, এ নৌপথে মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো ফেরী নেই। ফেরী রজনীগন্ধার কাগজপত্র সব ঠিক ছিলো, ফিটনেস ছিলো, সার্ভে ছিলো। অনেকেই বলেছে যে ফিটনেস ছিল না। তারা এটা না জেনে বলেছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ৯টি রো-রো ফেরী, ৩টি ইউটিলিটি ফেরী, ১টি কে টাইপ ফেরী ও ৩টি ছোট ফেরী রয়েছে। প্রত্যেকটি ফেরীরই ফিটনেস কাগজ পত্র ঠিক রয়েছে।

 বাল্কহেডের ধাক্কায় ফেরীটি ডুবেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকে অনেক কথা বলেছে। ঘটনাস্থলে কেউই ছিল না। বিভিন্ন কথার পরিপেক্ষিতে এগুলো আলোচনায় আসছে। যেহেতু এখন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত চলছে সেহেতু আমরা প্রকৃত কারণ জানতে পারবো। অনেকেই বলেছে প্রচন্ড শব্দ হয়েছে, ট্রলার অথবা বাল্কহেড ধাক্কা লেগে ডুবেছে। এগুলো তাৎক্ষণিক ভাবে উপস্থিত অথবা আশেপাশের লোকের বা স্থানীয়দের কথা ছিলো। ঘটনা যখন ঘটে তখন আমিও অনদা স্পটে ছিলাম না। লোকাল লোকদের ও জেলেদের কথার ভিত্তিতে ধারণা করা হয়েছিলো কোন কিছুর সাথে ধাক্কা লেগে ডুবেছে। তদন্ত প্রতিবেদন আসলে মূল কারণ জানা যাবে।

 কোটি টাকার ফগ লাইট অকেজো হবার বিষয়ে জানতে ডিজিএম শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ বলেন, আসলে ফগ লাইট গুলো পরীক্ষা মূলক ভাবে লাগানো হয়েছিলো। মূলত হালকা কুয়াশার মধ্যে এই ফগ লাইট কাজে লাগে, কিন্তু ঘন কুয়াশা হলে এই ফগ লাইট কোন কাজে আসে না।

 
আগামী দুই মাসের মধ্যে ভাঙ্গা-খুলনা-যশোর পর্যন্ত ট্রেন চালু হবে ঃ রেলপথ মন্ত্রী মোঃ জিল্লুল হাকিম
বসন্তপুরে ইমাম কমিটির উদ্যোগে খাবার স্যালাইন ও শরবত বিতরণ
রাজবাড়ী জেলা পুলিশের উদ্যোগে সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
সর্বশেষ সংবাদ