রাজবাড়ীর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোসাম্মৎ জাকিয়া পারভিন গতকাল ৫ই সেপ্টেম্বর পাংশা উপজেলার সরিষা সেনপাড়া গ্রামের বৃদ্ধা আশালতা দাস(৭৫) হত্যা মামলায় অভিযুক্ত একই গ্রামের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি বিশ্বজিত কুমার বিশ^াস (২৪)কে মৃত্যুদন্ড সহ ২০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ প্রদান করেছেন।

 এ হত্যাকান্ডের ৬মাস ২৪ দিনের মাথায় আদালতে আসামী বিশ্বজিত কুমার বিশ^াসের ফাঁসির আদেশ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।  

 অভিযুক্ত বিশ্বজিত কুমার বিশ^াস গত ১৩ই ফেব্রুয়ারী ভোরে বৃদ্ধা আশালতা দাসকে বাড়িতে ঢুকে হাতুড়ির দিয়ে তার মাথার পেছনে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে তার গলা, কানে ও হাতে থাকা স্বর্ণালঙ্কার লুট করে পালিয়ে যায়।

 খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থলে আসে পাংশা থানা পুলিশ। হত্যাকান্ডের কয়েক ঘন্টার মধ্যে পুলিশ অভিযুক্ত বিশ্বজিত কুমার বিশ^াসকে গ্রেফতার ও লণ্ঠিত স্বর্ণালংকার উদ্ধার করে। 

 মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বিশ্বজিৎ কুমার বিশ্বাস রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলা সরিষা ইউনিয়নের সরিষা গ্রামের সুজিত বিশ্বাসের ছেলে। সে পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। নিহত আশালতা দাস ওই গ্রামের মৃত সন্তোষ দাসের স্ত্রী।

 মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আশালতা দাসের স্বামী মারা যায় ১১বছর আগে। তার দুই মেয়ের অনেক আগেই বিয়ে হয়েছে। মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনি সবাই পাংশা শহরে থাকে। গ্রামের বাড়ীতে আশালতা দাস একাই বসবাস করতো। পুরাতন বাড়ীতে পুকুর, মাঠের জমি ছাড়াও বাগান রয়েছে তার। আশালতা দাসের দান করা জমির ওপর এলাকায় বিদ্যালয়, হাট-বাজার হয়েছে। এসব দেখাশোনা করার জন্য লোকও ছিল। প্রতিদিনের ন্যায় চলতি বছরের ১২ই ফেব্রুয়ারী-২০২৪ আশালতা দাস রাতের খাবার খেয়ে নিজ বাড়ীতে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন ১৩ই ফেব্রুয়ারী সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বাড়ীর কাজের লোক আশালতা দাসের মরদেহ ঘরের বারান্দায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই দিন নিহতের জামাই স্বপন কুমার বিশ্বাস বাদী হয়ে পাংশা থানায় ২/৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করে। বিজ্ঞ আদালত সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আসামী বিশ্বজিত কুমার বিশ^াসকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড করার আদেশ প্রদান করেন আদালত।

 রাজবাড়ী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর(পিপি) আইনজীবী এডঃ মোঃ উজির আলী শেখ বলেন, আসামী বিশ্বজিত কুমার বিশ^াসের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দন্ডবিধি ৩০২ ধারায় তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আমি মনে করি এই দন্ডাদেশের দ্বারা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সমাজের জন্য একটা ম্যাসেজ যে অপরাধ করলে কেউ পার পায়না। রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ে সন্তুষ্ট।