রাজবাড়ী জেলার কালুখালীতে কিশোর নীরব শেখ(১৭) হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকান্ডে জড়িত মূল আসামী মোঃ মিজান (২২)কে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
গতকাল ৬ই এপ্রিল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মোছাঃ শামিমা পারভীন।
গ্রেপ্তারকৃত মিজান কালুখালী উপজেলার বাগলপুর গ্রামের টেন্ডু শেখের ছেলে।
নিহত নীরব শেখ কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের হরিণবাড়িয়া গ্রামের জিয়ারুল শেখের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে নীরব বড়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গত ২০শে মার্চ নীরব শেখ তার নিজ বাড়ী কালুখালী উপজেলার হরিণবাড়িয়া গ্রামের মাধবপুর বাজার সংলগ্ন এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়। পরবর্তীতে গত ২১শে মার্চ রাত সাড়ে ৮টার দিকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির মোবাইল নম্বর থেকে নীরব শেখের বাবার মোবাইলে ফোন করে নীরব শেখ তাদের কাছে জিম্মি আছে বলে জানায় এবং তাকে ছাড়িয়ে নিতে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবী করা হয়।
পরবর্তীতে মুক্তিপণ দাবীকারীর মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এর দুইদিন পর গত ২৩শে মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের বাগঝাপা সালেহপুর পদ্মা নদীতে কোমরে লোহার শিকল এবং প্লাষ্টিকের বস্তা কোমরে বাঁধা অবস্থায় নীরব শেখের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই দিনই নীরবের পিতা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে কালুখালী থানায় একটি অপহরণ ও হত্যা মামলা দায়ের করে। এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য থানা পুলিশ ও ডিবির সমন্বয়ে একাধিক টিম মাঠে নামে।
মামলা তদন্তের একপর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৫ই এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে মিজানকে কালুখালী উপজেলার বাগলপুর গ্রামে তার বসতবাড়ী হতে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সুপার মোছাঃ শামিমা পারভীন আরো জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামী মিজান জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছে নেহাদ আলী ওরফে লিয়াকত শেখ এবং কাইয়ুম শেখ উভয়ই নীরবের বাবার আপন চাচাতো ভাই। মিজান জানায়, নেহাদ শেখ এবং কাইয়ুম শেখ এর মধ্যে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। এ ঘটনায় নীরবের বাবা নেহাদের পক্ষ নেয়ায় এবং নেহাদের সাথে নীরবের বাবার সুসম্পর্ক থাকার কারণে নীরবের চাচাতো ভাই কাইয়ুম প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নীরব শেখকে অপহরণ, মুক্তিপন এবং খুন করার পরিকল্পনা করে।
পুুলিশ সুপার জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামী মিজান নীরবের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে বালুভর্তি প্লাষ্টিকের বস্তা নাইলনের রশি এবং লোহার শিকল দিয়ে কোমরের সাথে বেঁধে পদ্মা নদীতে ফেলে দেয়।
এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বাকি আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ক্রাইম এন্ড অপস্) মোঃ শরীফ আল রাজীব, সহকারী পুলিশ সুপার(পাংশা সার্কেল) দেবব্রত সরকার, ডিআইও-১ আব্দুর রহিম, ডিবির ওসি মফিজুর রহমানসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।