পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশন গত ১২ই জুন সাড়ম্বরে ও জাঁকজমক “বাংলাদেশ উৎসব” আয়োজনের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করেছে।
বাংলা নববর্ষ ১৪২৮ উদযাপনও এই অনুষ্ঠানের অন্যতম অনুসঙ্গ ছিল। সম্পূর্ণ বাঙ্গালী ধারায় আমন্ত্রিত অতিথিগণকে সম্ভাষণ, জাতির পিতার জীবন ও কর্মের উপর প্রদর্শনী, জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং হরেক রকম সুস্বাদু বাংলাদেশী খাবার দিয়ে আপ্যায়ন ছিল এই উৎসবের মূল আকর্ষণ। সমগ্র চ্যান্সারী আলোকমালা, রং বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন, ফুল ও ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশী লোকপণ্য ইত্যাদি দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়।
পাকিস্তান সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ, সঙ্গীতজ্ঞ, চিত্রশিল্পী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সুশীল সমাজ, মিডিয়া ব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রায় দুই শতাধিক অতিথিবৃন্দ এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বাংলাদেশী কমিউনিটি সদস্য, পাকিস্তানে প্রশিক্ষণরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর কর্মকর্তাবৃন্দ, হাইকমিশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যগণ এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখযোগ্য অতিথিদের মধ্যে পাকিস্তানের লোক ও ঐতিহ্য সংস্থা ‘লোক ভিরসা’-এর নির্বাহী পরিচালক, ঙওঈ-এর বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ঈঙগঝঞঊঈঐ-এর কো-অর্ডিনেটর জেনারেল এবং সার্ক আরবিট্রেশন কাউন্সিলের মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে হাইকমিশনের প্রবেশদ্বারে নির্মিত তোরণে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নারকেলের নাড়ু, গোলাপের কুড়ি ও ফুলের পাঁপড়ি ছড়িয়ে বরণ করা হয়।
পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রুহুল আলম সিদ্দিকী কর্তৃক ‘বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন’-এর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়।
প্যাভিলিয়নে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’-এর বাংলা, ইংরেজি ও উর্দু সংস্করণ, কারাগারের রোজনামচা, চৎরংড়হ উরধৎরবং সহ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনের উপর বই, আলোকচিত্র ও পোস্টার প্রদর্শন করা করা হয়।
হাইকমিশনার আগত অতিথিদের নিকট বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল জীবন সংগ্রামের গল্প শোনান। পৃথিবীর বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা এবং এ উপলক্ষ্যে এ বছরের শেষদিকে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য শান্তি সম্মেলন সম্পর্কেও তিনি বিদেশী অতিথিদেরকে অবগত করেন।
স্বাগত বক্তব্যে হাইকমিশনার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বিগত একযুগে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সকল ক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে সে বিষয়গুলি আগত অতিথিদের নিকট তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে “রূপকল্প-২০২১” অর্জনের মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে অবস্থান নিয়েছে এবং “রূপকল্প-২০৪১” অর্জনের মাধ্যমে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবার অভীষ্ট লক্ষ্যে দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই গতিশীলতা ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশ অচিরেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ সময়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়নের উপর একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের ছেলে-মেয়েরা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সাজপোষাকে সুসজ্জিত হয়ে র্যালী, নাচ ও গান পরিবেশন করে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই শিশুরা মুজিব শতবর্ষের ব্যানারসহ র্যালীতে অংশগ্রহণ করে এবং “জয় বাংলা” “জয় বঙ্গবন্ধু” শ্লোগানে হাইকমিশন প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তোলে। সকলের সমবেত অংশগ্রহণে দেশের গান পরিবেশন করে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী জিলাপি, পিয়াজু ও চিতই পিঠা সরাসরি তৈরি করে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়। এছাড়াও পচিশটির অধিক বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও প্রচলিত খাবারের স্বাদের সাথে অতিথিদের পরিচয় ঘটে।
উপস্থিত অতিথিগণ এ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য দূতাবাসকে ধন্যবাদ জানান এবং অনুষ্ঠানটির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
