ঢাকা রবিবার, মে ৫, ২০২৪
জনবল সংকটে চলছে রেলওয়ে রাজবাড়ী অঞ্চলের কার্যক্রম॥রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার
  • মইনুল হক মৃধা
  • ২০২২-০৮-১৩ ১৫:৪৮:৩২
জনবল সংকটে চলছে রেলওয়ের রাজবাড়ী অঞ্চলের বন্ধ রয়েছে জেলার অনেক রেলওয়ে স্টেশন। এতে টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা না থাকায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার -মাতৃকণ্ঠ।

জনবল সংকটে চলছে রেলওয়ের রাজবাড়ী অঞ্চলের কার্যক্রম। ফলে বন্ধ রয়েছে জেলার অনেক রেলওয়ে স্টেশন। বন্ধ থাকা এসব স্টেশনগুলোতে টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা না থাকায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
  রাজবাড়ী রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া ঘাট-পোড়াদহ, রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী-ভাঙ্গা, রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া ও রাজবাড়ী-রাজশাহী রুটে প্রতিদিন ৫টি ট্রেন ১৪ বার আসা-যাওয়া করে। দৌলতদিয়া ঘাট-পোড়াদহ রুটের ১৪টি রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যে গোয়ালন্দ বাজারসহ ৫টি রেলওয়ে স্টেশনে কোন জনবলই নেই। রাজবাড়ী থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার রেলপথে স্টেশন রয়েছে ১২টি। এর মধ্যে স্টেশন মাস্টার আছে ৫টিতে। এ রুটের খানখানাপুর, বসন্তপুর, অম্বিকাপুর, ফরিদপুর কলেজ, বাখুন্ডা, তালমা ও পুকুরিয়া স্টেশনে কোন মাস্টার নেই। 
  রাজবাড়ী-ভাটিয়াপাড়া ৯৪ কিলোমিটার রেলপথের ১৭টি স্টেশনের মধ্যে ৯টিতে কোনো মাস্টার নেই। এ স্টেশনগুলো হলো- রামদিয়া, আড়কান্দি, নলিয়াগ্রাম, ঘোড়াখালী, সাতৈর, বোয়ালমারী, স¯্ররাইল, বনমালীপুর ও ব্যাসপুর। উল্লেখিত স্টেশনগুলোতে বুকিং সহকারী পদও শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। বন্ধ থাকা এসব স্টেশনে শুধু ট্রেন থামে। এছাড়া নেই আর কোনো কার্যক্রম। ট্রেনের সময়-সূচী অনুযায়ী আপ-ডাউন কাছাকাছিতে রয়েছে কয়েকটি ট্রেন। অনেক ক্ষেত্রেই  দিতে হয় ক্রসিং। বন্ধ থাকা স্টেশনগুলোতে ক্রসিং দেওয়ার সুযোগ না থাকায় ট্রেন ক্রসিংয়ে সময় লাগে অনেক বেশী। যেমন- রাজবাড়ী থেকে কালুখালীর মধ্যে রয়েছে সূর্যনগর ও বেলগাছী স্টেশন। এই ২টি স্টেশনই বন্ধ। মাঝে-মধ্যেই খুলনা থেকে ছেড়ে আসা নকশীকাঁথা মেইল ট্রেন কালুখালী এসে দাঁড়িয়ে থাকে দীর্ঘক্ষণ। কারণ একই সময়ে রাজবাড়ী থেকে ভাটিয়াপাড়াগামী মেইল ট্রেনটি গিয়ে থাকে। আবার দুপুরে নকশীকাঁথা মেইল ট্রেন যখন খুলনা অভিমুখে যায় তখন পোড়াদহ থেকে দৌলতদিয়া ঘাটগামী শাটল ট্রেনের আসার সময়। হয় মেইল ট্রেনকে রাজবাড়ী দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, অন্যথায় শাটল ট্রেনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কালুখালীতে। কিন্তু বেলগাছী স্টেশনটি চালু থাকলে দুুদিক থেকেই সময় বাঁচতো। যাত্রীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। এছাড়াও বন্ধ থাকা স্টেশনগুলোতে কোনো টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা নেই। নেই মালামাল বুকিংয়ের কোনো ব্যবস্থাও। যাত্রীরা টিকেট কাটতে পারছে না। ব্যবসায়ীরাও তাদের পণ্য বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে পাঠাচ্ছেন।
  সরেজমিনে রাজবাড়ী সদর উপজেলার সূর্যনগর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনের আশপাশ নোংরা-আবর্জনায় ভরা। দেখে মনে হবে কোন পরিত্যক্ত স্থাপনা। স্টেশনে নেই কোন প্লাটফর্ম। স্টেশনের ভবনের অবস্থা জরাজীর্ণ। অনেক খুঁটিই নষ্ট হয়ে গেছে। দরজা জানালা খুলে খুলে পড়ছে। নেই যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা। স্টেশনের কক্ষে ঝুলানো রয়েছে তালা। টিকেট কাউন্টারের সামনে একটি চৌকি পাতা রয়েছে তার উপরে একটি ছাগল শুয়ে আছে। পাশেই একটি বেঞ্চে দুইজন ব্যক্তি দাবা খেলায় ব্যস্ত। এরই মধ্যে কুষ্টিয়া থেকে শাটল ট্রেনটি এসে থামে স্টেশনে তবে ট্রেন আসার আগে বাজেনি কোন ঘণ্টা। এমনকি যাত্রীরা ট্রেনে উঠার আগে কোন টিকেটও কাটেনি। 
  একই উপজেলার বেলগাছী স্টেশন গিয়ে দেখা যায়, স্টেশন মাস্টারের কক্ষটি তালা বন্ধ। টিকেট কাউন্টারের কক্ষটিও রয়েছে তালা ঝুলানো। যাত্রীদের বিশ্রাম কক্ষটির অবস্থাও জরাজীর্ণ। সেখানে কয়েকজন যাত্রী বসে আছে ট্রেনের অপেক্ষায়। স্টেশন ভবনের বাইরে চেয়ার টেবিল নিয়ে ছাতার নিচে বসে আছে  বেসরকারী ট্রেনের টিকেট বিক্রির জন্য দায়িত্বরত একজন। যাত্রীদের বসার জন্য জায়গা না থাকার কারণে স্টেশনের প্লাটফর্মের উপরে হাঁটাহাঁটি করছে অনেকেই। অনেকেই আবার আশপাশের চায়ের দোকানসহ অন্যান্য দোকানের বেঞ্চে বসে আছেন। 
  স্থানীয় রফিক মৃধা বলেন, ট্রেনে ওঠার মতো কোন ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি হলে স্টেশনের বসার কোন জায়গা নেই। টিকেট কাটার ব্যবস্থা নেই। অনেক সময় ট্রেনে উঠলে জরিমানাসহ টিকেট কাটতে হয়। যদি স্টেশন মাস্টার থাকতো, প্লাটফর্ম মেরামত করা হতো, যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা থাকতো-তাহলে সবাই সুবিধা পেত। 
  মাসুম খান নামে এক যাত্রী বলেন, রাজবাড়ী জেলার স্টেশনগুলো একসময় খুবই জমজমাট ছিল। যাত্রীদের বসার সুব্যবস্থা ছিল, স্টেশন মাস্টার ছিল, পটার ছিল, মাল বুকিংয়ের ব্যবস্থা ছিল, ট্রেন আসার আগে ঘণ্টা বাজতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে কখন ট্রেন আসে আর কখন ট্রেন যায় সেটা যাত্রীরা জানে না। স্টেশনে কোন স্টেশন মাস্টার নেই, পটার নেই, মাল বুকিংয়ের কোন ব্যবস্থা নেই, ঘণ্টা  বাজে না। অনেক স্টেশনের ভবনগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। লোকবল সংকটের কারণে অনেক স্টেশনে ট্রেন থামে না। এদিকে সরকারের নজর দেয়া দরকার। 
  বেলগাছী স্টেশনে বেসরকারী ট্রেনের টিকেট বিক্রেতা আব্দুল মাজেদ বলেন, সরকারী ট্রেনের কোন টিকেট বিক্রি হয় না। কারণ স্টেশন মাসার নেই, টিকেট বিক্রেতা নেই। যে কারণে সরকারী ট্রেনের যাত্রীরা টিকেট ছাড়াই ট্রেনে উঠে। বন্ধ থাকা স্টেশনগুলোতে শুধুমাত্র বেসরকারী খাতের ট্রেনের টিকেট বিক্রি হয়। 
  নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন টিটিই বলেন, রাজবাড়ী সেকশনে টিটিই রয়েছেন মাত্র ৪জন। ট্রেন চলাচল করছে পাঁচটি। এর মধ্যে দু’টি অবশ্য বেসরকারী খাতে রয়েছে। মাত্র ৪জন টিটিই দিয়ে তিনটি ট্রেনের যাত্রী চেকআপ করা খুবই কষ্টকর। ফলে যাত্রীদের টিকেট কাটার ইচ্ছে থাকলেও টিকেট করতে পারে না। টিটিই সংকটের কারণে আমরাও সব যাত্রীর কাছে পৌঁছাতে পারি না। ফলে অনেক যাত্রীই বিনা টিকেটে ট্রেন ভ্রমণ করছে।
  সূর্যনগর রেলওয়ে স্টেশনের পুটার সবুর আলী মোল্লা দীর্ঘদিন ধরে পাহারাদার হিসেবে কর্মরত আছেন। 
  তিনি বলেন, এখানে কোন টিকেট বিক্রি হয় না। আমি যোগদানের পর ২/৩ বছর টিকেট বিক্রি করেছিলাম নিজ দায়িত্বে। এখন আর টিকেট বিক্রি হয় না। স্টেশনটার অবস্থাও খারাপ। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। সে সময় ছাতা নিয়ে রুমের মধ্যে বসে থাকতে হয়। যাত্রীদের বসার জায়গা নেই, বাথরুম নেই। সমস্যাগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন লাভ হয় নাই।
  রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার তন্ময় কুমার দত্ত বলেন, রাজবাড়ী জেলার অনেক স্টেশনে জনবল সংকট বিরাজ করছে। অনেক স্টেশনে স্টেশন মাস্টার না থাকায় কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সেই সাথে ট্রেন ক্রসিংয়েও সমস্যায় পরতে হচ্ছে। সময়মত ট্রেন পৌঁছানোয় ভোগান্তিকে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। জনবল সংকটের কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
  পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা(পাকশী) আনোয়ার হোসেন বলেন, জনবল সংকটের কারণে বন্ধ থাকা স্টেশনগুলোতে লোকবল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নতুন করে নিয়োগ দেয়া হলে সংকট কাটিয়ে উঠা সম্ভব, তাছাড়া হবে না। এগুলো নতুন বন্ধ না, অনেক দিন ধরেই বন্ধ আছে। স্টেশন বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব হারানোসহ ট্রেন ক্রসিংয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

 

আগামী দুই মাসের মধ্যে ভাঙ্গা-খুলনা-যশোর পর্যন্ত ট্রেন চালু হবে ঃ রেলপথ মন্ত্রী মোঃ জিল্লুল হাকিম
বসন্তপুরে ইমাম কমিটির উদ্যোগে খাবার স্যালাইন ও শরবত বিতরণ
রাজবাড়ী জেলা পুলিশের উদ্যোগে সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত
সর্বশেষ সংবাদ