ঢাকা শনিবার, মে ৪, ২০২৪
রাজবাড়ীর ২টি চারকোল কারখানার কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ
  • আশিকুর রহমান
  • ২০২২-০১-২৫ ১৩:৪২:০০
রাজবাড়ী সদর উপজেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে গড়ে তোলা অবৈধ ২টি চারকোল কারখানার ছাই ও কালো ধোঁয়ায় মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে -মাতৃকণ্ঠ।

রাজবাড়ী সদর উপজেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে গড়ে তোলা অবৈধ ২টি চারকোল(পাটখড়ির ছাই থেকে কার্বন তৈরীর) কারখানার ছাই ও কালো ধোঁয়ায় মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

  এই পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর। শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা ও হাঁপানীসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বয়োবৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। একই কারণে কমছে ফসলী জমির উৎপাদনও।

  সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজবাড়ী সদর উপজেলার শহীদওহাবপুর ইউনিয়নের দর্পনারায়ণপুর গ্রামে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে এবং খানখানাপুর ইউনিয়নের চরখানখানাপুর গ্রামে ঢাকা-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে এই ২টি চারকোল কারখানা। এসব কারখানায় পাটখড়ির ছাই থেকে উৎপাদিত কার্বন চীনে রপ্তানী করা হয়। যা চীনে মোবাইলের ব্যাটারী, প্রসাধনী, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ, কার্বন পেপার, ফটোকপির কালি, আতশবাজী, ফেসওয়াশ ও প্রসাধন তৈরীর কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আবাসিক এলাকায় শিল্প ও কল-কারখানা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও এই চারকোল কারখানার মালিকরা বিনা বাধায় বছরের পর বছর কারখানা পরিচালনা করে যাচ্ছেন। এজেন্টদের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকা থেকে কিনে আনা হয় পাটখড়ি। এরপর সেগুলো বিশেষ চুল্লীতে লোড করে আগুন জ্বালানো হয়। ১০-১২ ঘণ্টা জ্বালানোর পর চুল্লীর মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে কোনভাবে অক্সিজেন প্রবেশ করতে না পারে। এভাবে ৪দিন রাখার পর সেখান থেকে বের করে ক্র্যাশিং (চূর্ণ) করে কার্বন প্যাক করা হয়। চুল্লী জ্বালানোর সময় কারখানা থেকে প্রচুর ধোঁয়া নির্গত হয়। এই ধোঁয়াতেই মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষিত হয়।

  দর্পনারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা মজিবর শেখ বলেন, কার্বন তৈরীর কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় আশপাশের আকাশ কালো হয়ে যায়। ধোঁয়ার কারণে রাতে ঘরে থাকা যায় না। ঘরে থাকলেও চোখ জ্বলে। দূষিত ধোঁয়ার কারণে শিশু ও বয়োবৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা ও হাঁপানীসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। 

  একই গ্রামের ইমরান হোসেন বলেন, ধোঁয়ার সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থ থাকে। এসব পদার্থ বাতাসের সঙ্গে মিশে গাছপালায় লাগে। এতে এলাকার গাছপালায় কোনো ফল হয় না। আমের মৌসুমেও গাছে মুকুলের দেখা পাওয়া যায় না। রাতে ঘরে শুয়ে থাকলে সকালে কাশির সঙ্গে ছাই বের হয়। 

  চরখানখানাপুর গ্রামের বাসিন্দা আলম শেখ বলেন, এই কারখানার কারণে আশপাশের এলাকার ফসলী জমির উৎপাদন কমে গেছে। কৃষকরা জমিতে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেও ফলন বাড়াতে পারছেন না। তারা চান দ্রুত এই কারখানাটি এখান থেকে অপসারণ করা হোক।

  রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার(আরএমও) ডাঃ মোঃ আব্দুর রহমান জানান, বেশী পরিমাণ কার্বন নিঃসৃত হলে বাতাসের সঙ্গে কার্বন অনুগুলো মিশে এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এছাড়া শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, হাঁপানীসহ ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগ এবং বিভিন্ন প্রকার চর্ম রোগের আশঙ্কা থাকে।

  পরিবেশ অধিদপ্তরের ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এ.এইচ.এম, রাসেদ জানান, রাজবাড়ীর কোন চারকোল কারখানারই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব চারকোল কারখানার বিরুদ্ধে দ্রুতই অভিযান চালানো হবে।

  রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মার্জিয়া সুলতানা বলেন, তিনি নতুন যোগদান করেছেন। এ জন্য চারকোল কারখানার বিষয়টি তার জানা নেই। কেউ অভিযোগ দিলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

  বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে দর্পনারায়ণপুর গ্রামের চারকোল কারখানায় গেলে কারখানার ম্যানেজার মোঃ নাইম কোন কথা বলতে রাজী হননি। তিনি ঢাকায় অবস্থানরত মালিকের মোবাইল নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। মালিক আতিকুর রহমানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবী করেন, কারখানা পরিবেশবান্ধব। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও রয়েছে। তবে সেটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তারা মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করবেন।

   চর খানখানাপুর গ্রামের চারকোল কারখানায় গেলে সেখানে কর্মরত কেউ গেট খোলেননি। মালিক ইব্রাহিম সরদারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

রাজবাড়ী-ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে দুই জোড়া নতুন ট্রেন উদ্বোধন আজ
রাজবাড়ীতে শুদ্ধ আবৃত্তি চর্চার কেন্দ্র কাব্যগৃহ’র আত্মপ্রকাশ
ক্যারিয়ার ক্লাব অব রাজবাড়ীর ৩য় ক্যারিয়ার ফেস্ট অনুষ্ঠিত
সর্বশেষ সংবাদ