রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে খাবারের সন্ধানে বিপন্ন মুখপোড়া একটি হনুমানকে লোকালয়ে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে।
গত কয়েক দিন ধরে হনুমানটি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছে। খাবারের সন্ধানে বাসাবাড়ী, দোকানপাট, হাটবাজারে ঘোরাফেরা করছে। বন্য প্রাণীটিকে দেখে অনেকেই খাবার কিনে দিচ্ছে। কয়েক দিন গাছের ডালে, ঘরের চালে, ভবনের ছাদে উঠে দূরে দূরে থাকত। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে সে অনেকটাই স্বাভাবিকভাবে মিশে গেছে মানুষের সাথে। টিকে থাকার তাগিদে সাথী বিহীন হনুমানটি মানুষের সাথে এভাবে মিলে মিশে থাকার চেষ্টা করছে ।
স্থানীয়রা জানান, দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দর বন এলাকা হতে ছেড়ে আসা খাবার বোঝাই করা যে কোন যানবাহনের ছাদে উঠে হনুমানটি দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় চলে আসে। দৌলতদিয়া ফেরী ঘাট এলাকায় কয়েক দিন থাকার পর এখন শহর এলাকায় আছে। এভাবে মাঝে মধ্যেই এ এলাকায় হনুমান চলে আসার ঘটনা ঘটছে।
গতকাল সোমবার সকাল দশটার দিকে বিশাল দেহের বিপন্ন মুখ পোড়া হনুমানটি গোয়ালন্দ বাজার রেলগেট এলাকায় চলে আসে। ক্ষুধার্ত হনুমানটি এখানে মজিবর রহমান নামের এক ফল ব্যবসায়ীর দোকানে ঢুকে পড়ে অবলীলায়। দোকানদার তাকে একটি ফল দিলে সে দীর্ঘ সময় ধরে ফলটি খায়।এ সময়ের মধ্যে সে দোকানের অন্য কোন কিছু খায়নি কিংবা ক্ষতি করেনি।
এ ভাবে হনুমানটি বাজারের খাবার হোটেল, ফলের দোকান, নাস্তার দোকানে গিয়ে মানুষের মতো বেঞ্চে বসে পড়ে। হোটেল মালিক কার্ত্তিক ঘোষ হনুমানটিকে তাড়িয়ে না দিয়ে কিছু খাবার খেতে দেন। এ সময় আরো অনেকেই হনুমানটিকে বিভিন্ন ধরনের খাবার দেয়। সে যতটা সম্ভব খেয়ে সেখান থেকে চুপচাপ চলে যায়।
এর আগে গত ২৫শে জুন দুপুরের প্রচন্ড রোদে ক্লান্ত হনুমানটি গোয়ালন্দ বাস¯ট্যান্ড এলাকার একটি দোকানে ঢুকে মেঝেতে শুয়ে পড়ে। দোকানদার ফ্যান ছেড়ে দিলে হনুমানটি ঠান্ডা বাতাসে দীর্ঘক্ষন ঘুমিয়ে নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী মইনুল হক ও বাদশা মোল্লা বলেন, মানুষের সাথে এভাবে স্বাভাবিকভাবে কোন হনুমানের মিশে যাওয়া এর আগে তারা দেখেনি। লোকজনের মানবিকতা দেখে খুব ভালো লেগেছে। মুখপোড়া হনুমানটি দেখতে উৎসুক জনতা ও শিশুরি ভিড় করছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নুরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, হনুমানটি হয়তো কোন কলার ট্রাক বা ট্রেনের ছাদে করে সুন্দরবন এলাকা হতে এদিকে চলে এসেছে। এখানে আসার পর সে সঙ্গী বিহীন হয়ে গেছে। তাই সে বেঁচে থাকার তাগিদে মানুষের সাথে স্বাভাবিক আচরন করছে। কারো কোন ক্ষতি করছে না। মানুষও ক্ষতি করে না এমন কোন প্রাণি পেলে স্বভাবতই ভালোবাসে। খাবার দেয়, সহযোগিতা করে।
তিনি আরো আরো বলেন, হনুমান ও বানরের জ্ঞান- বুদ্ধি অনেক প্রবল। ওরা বোঝে কেন পরিবেশে কিভাবে নিজেকে খাপ খাওয়াতে হয়। এ সময় তিনি সকল প্রানীর প্রতি এভাবে মানবিক হওয়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।