ঢাকা শনিবার, মে ৪, ২০২৪
রাজবাড়ীতে বাবলু হত্যা মামলায় সাবেক পৌর কাউন্সিলর বাচ্চুসহ ২জনের ফাঁসি॥৫জনের যাবজ্জীবন
  • আসাদুজ্জামান নুর
  • ২০২২-১১-২৮ ১৪:৩৫:২৯

রাজবাড়ী জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক এস.এম সামছুল আলম বাবলু হত্যা মামলায় সাবেক পৌর কাউন্সিলর মীর এনাম আলী বাচ্চুসহ ২জন আসামীর ফাঁসি, ৫জনের যাবজ্জীবন ও ৪ জনকে খালাস দিয়েছে জেলা ও দায়রা জজ আদালত। 

   গতকাল ২৮শে নভেম্বর দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমীন জনাকীর্ণ আদালতে এই রায় ঘোষণা করেন। এছাড়াও সাজাপ্রাপ্তদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় মামলার ১১ আসামীর মধ্যে ৮ আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। 

   ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামীদ্বয় হলো- রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুর ২নং রেলগেট এলাকার মৃত মীর নূরুদ্দোহার ছেলে ও রাজবাড়ী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মীর এনাম আলী বাচ্চু এবং ১নং বেড়াডাঙ্গা এলাকার মোকাম মিয়ার ছেলে সানোয়ার হোসেন জকি। তাদের মধ্যে সানোয়ার হোসেন জকি পলাতক রয়েছে। 

   যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হলো- রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুর লোকোশেড এলাকার মৃত জামাল মিয়ার ছেলে ইয়াকুব মিয়া, বিনোদপুরের বাবলু মিয়ার ছেলে রানা মিয়া, ১নং বেড়াডাঙ্গার আজিজ দেওয়ানের ছেলে শাহিন দেওয়ান, একই এলাকার আঃ আজিজ খানের ছেলে ফরহাদ হোসেন বাপ্পী ও কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গী গ্রামের আকমল বিশ্বাসের ছেলে রশিদ বিশ্বাস। তাদেরকে যাবজ্জীবন জেলের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাস করে বিনাশ্রম জেলের আদেশ দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে রানা মিয়া ও ফরহাদ হোসেন বাপ্পী পলাতক রয়েছে। 

  এছাড়া বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত আসামীরা হলো- রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুর এলাকার মৃত চুন্নু ভূঁইয়া ওরফে কোকিল মিস্ত্রীর ছেলে খায়রুল ইসলাম ভূঁইয়া খায়রু, একই এলাকার ফরহাদ মন্ডলের ছেলে আরিফ মন্ডল, বিনোদপুর ক্যারেজের পিছনের রেলওয়ে কলোনীর এম.এ সাত্তারের ছেলে উজ্জ্বল ও বিনোদপুর রেল কলোনীর আবুল কাশেম কুলির ছেলে আরিফ কুলি।

   আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্ত আসামী মীর এনাম আলী বাচ্চু ও সানোয়ার রহমান জকির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণীত হওয়ায় তাদেরকে ১৮৬০ সালের পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক অনুমোদন সাপেক্ষে তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসির রজ্জুতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হলো। অভিযুক্ত আসামী ইয়াকুব, রানা, রশিদ ও শাহিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণীত হওয়ায় তাদেরকে পেনাল কোডের একই ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৫০,০০০০/= টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। অপর অভিযুক্ত আসামী ফরহাদ হোসেন বাপ্পীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণীত হওয়ায় পেনাল কোডের ৩০২/১০৯ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। এছাড়া অভিযুক্ত আসামী খায়রুল, উজ্জ্বল, আরিফ মন্ডল ও আরিফ কুলির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণীত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস প্রদান করা হলো। 

   রায় ঘোষণার পর মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডঃ উজির আলী শেখ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ভিকটিম এস.এম সামছুল আলম বাবলু খুন হওয়ার পর তার ভাই শহিদুল ইসলাম শহিদ বাদী হয়ে রাজবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী গ্রহণকারী ২ জন ম্যাজিস্ট্রেট, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ময়নাতদন্তকারী মেডিকেল অফিসারসহ ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং অন্যান্য প্র্রমাণাদী গ্রহণ শেষে এই রায় ঘোষণা করেছেন। দৃষ্টান্তমূলক এই রায়ে আমরা খুশি। 

  উল্লেখ্য, জমিজমা নিয়ে পূর্ব শত্রƒতার জেরে গত ২৩শে আগষ্ট-২০১২ দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুর পুলিশ ফাঁড়ির সন্নিকটে(অনুমান ২শ গজের মধ্যে) সাংবাদিক সানাউল্লাহ’র বাড়ীর সামনে রাস্তার উপর বিএনপি নেতা এস.এম সামসুল আলম বাবলুকে ঘেরাও করে খুব কাছে থেকে এলোপাতারীভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় তিনি গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে পায়ে হেঁটে শহরের আজাদী ময়দান থেকে পালাগান শুনে বিনোদপুর এতিমখানা সংলগ্ন নিজ বাড়ীতে ফিরছিলেন। তার কিছুদিন আগে অভিযুক্তরা চাঁদার দাবীতে বাবলুর ভাই শহিদুলকে গুলি করে আহত করলে বাবলু বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ০৩/০৩/২০১২ ইং তারিখে রাজবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় পুলিশ আদালতে চার্জশীট দাখিল করলে আসামীরা মামলাটি তুলে নেয়ার বাবলুর উপর চাপ সৃষ্টি করে। এতে রাজী না হওয়ায় বাবলুকে হত্যার হুমকী দেয়া হয়।

   এছাড়াও বাবলু হত্যার ঘটনায় নিহতের ভাই শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ৭জনকে আসামী করে রাজবাড়ী থানায় রাজবাড়ী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মীর এনাম আলী বাচ্চু, তার ভাই মীর বাবু, খায়রু, আরিফ  মন্ডল, অনিক, রানা, আরিফ কুলিসহ অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের আসামী করে রাজবাড়ী থানার মামলা নং-৩০, তাং-২৫/৮/২০১২, ধারাঃ ৩৪১/৩০২/৩৪ দঃ বিঃ দায়ের করে। এ হত্যা মামলার পলাতক প্রধান আসামী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মীর এনাম আলী বাচ্চু (৪৫)কে পুলিশ ৯মাসের অধিক সময় পর গত ৬ই জুন-২০১৩ তারিখে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে পরদিন আদালতে সোপর্দ করে। ওইদিন(৭ই জুন-২০১৩) রাজবাড়ীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাহিদুল আজাদের আদালতে বাচ্চু ফৌঃ কাঃ বি’র ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। রাজবাড়ী থানায় হত্যা মামলা রুজুর কিছুদিন পর মামলার ১ নং আসামী তৎকালীন সাবেক পৌর কাউন্সিলর মীর এনাম আলী বাচ্চু গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি কারাগারেই রয়েছে। এছাড়া বাবলু নিহত হওয়ার পর তার স্ত্রী বিএনপি নেত্রী ফারজানা আলম ডেইজী ২ দফায় রাজবাড়ী পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর (১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ড) নির্বাচিত হয়েছেন।       

রাজবাড়ী-ঢাকা-ভাঙ্গা রুটে দুই জোড়া নতুন ট্রেন উদ্বোধন আজ
রাজবাড়ীতে শুদ্ধ আবৃত্তি চর্চার কেন্দ্র কাব্যগৃহ’র আত্মপ্রকাশ
ক্যারিয়ার ক্লাব অব রাজবাড়ীর ৩য় ক্যারিয়ার ফেস্ট অনুষ্ঠিত
সর্বশেষ সংবাদ