ঢাকা সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪
এক দফা দাবীতে গোয়ালন্দ মোড়ে বিএনপির বিভাগীয় রোড মার্চের পথসভা
  • শিহাবুর রহমান/মীর সামসুজ্জামান
  • ২০২৩-১০-০৫ ০৩:০৫:২৫

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরানো ও ভোট চুরি করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এবং বিরোধী দল ধ্বংস করার জন্য দেশনেত্রীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। তাদের ভয় এই জনপ্রিয় নেত্রী ও তারেক রহমান যদি বাইরে থাকে তাহলে তাদের এই অবৈধ সরকারের টিকে থাকার কোন সুযোগ নাই।
 গতকাল ৩রা অক্টোবর দুপুরে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ মোড়ে এক দফা দাবীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় রোড মার্চের উদ্বোধনী পথসভায় তিনি এ কথা বলেন।
 তিনি বলেন, জাতি আজ ক্রান্তিলগ্নে। একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা ১৪ বছর অতিক্রম করেছি। এই সময়ের মধ্যে হাজার হাজার মানুষকে গুম করা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে খুন করা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। ৪০ লক্ষের অধিক বিএনপি এবং বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। গণতন্ত্রের মৌলিক অধিকার জনগনের ভোটাধিকার চুরি করেছে। অথ্যাৎ অনির্বাচিত অবৈধ দখল করা ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের উপর চেপে বসেছে।
 তিনি বলেন, আপনি যদি একবার অবৈধ অবস্থায় চলে যান, সেখানে থাকার জন্য আপনাকে একটার পর একটা অবৈধ কাজ করতে হবে। কারণ বৈধভাবে কেউ অবৈধ জায়গায় গিয়ে থাকতে পারে না। একবার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করলে এটা রাখার জন্য আপনাকে ক্রমান্বয়ে অবৈধ কাজ করে যেতে হবে। যে কারণে তাদের জনগনকে খুন করতে হচ্ছে, জনগনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠাতে হচ্ছে।
 আমির খসরু বলেন, আজকে শুধু খালেদা জিয়াকে জেলে দেয় নাই? তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যেকোন ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রথমে সে তার প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দিবে। খুন করবে, গুম করবে, মিথ্যা মামলা দিবে, গায়েবী মামলা দিবে, তারপর সে দেশের সম্পদ চুরি করবে। নিজেরা দেশের সম্পদ চুরি করবে এবং একটি চোর গোষ্ঠী তৈরী করবে। এই চোর গোষ্ঠী হচ্ছে যারা তাকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করে, যারা তাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য সহযোগিতা করে। যারা ব্যাংক চুরি করবে, যারা শেয়ার বাজার চুরি করবে। যারা টেন্ডারবাজির মাধ্যমে মেগা প্রজেক্ট চুরি করবে। যারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উচ্চমূল্যে মাল বিক্রি করে জনগনের পকেট থেকে টাকা নিয়ে যাবে এবং এই টাকা বিদেশে পাচার করবে। এটাই হচ্ছে ফ্যাসিস্টের নিয়ম। এই ফ্যাসিস্ট জনগনের কাছে যেতে ভয় পায়। এই ফ্যাসিস্ট জনগন বিচ্ছিন্ন। এই ফ্যাসিস্টের নির্ভরশীলতা হচ্ছে সরকারের কিছু দলীয় এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু দুর্নীতিবাজ দলীয় কর্মকর্তা, লুটেরা ব্যবসায়ী এবং দুর্নীতিবাজ দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদ। সকলে মিলে এরা একটা রিজিম তৈরী করেছে। এটাকে সরকার বলা যায় না। সরকার তো নির্বাচিত হয়। এই রিজিম জনগনের ভোট চুরি করে তাকে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সহায়তা করে। তাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য কেন বাংলাদেশের র‌্যাবের উপর স্যাংশন আসবে। একটা অবৈধ সরকারকে, একজন অবৈধ প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়া জন্য, ক্ষমতায় রাখার জন্য কেন র‌্যাবের উপর স্যাংশন আসবে। কেন র‌্যাবের ব্যক্তিগত স্যাংশন আসবে। একজন অবৈধ প্রধানমন্ত্রীকে একটি অবৈধ রিজিমকে ক্ষমতায় রাখার জন্য বাংলাদেশে কেন ভিসানীতি আসবে। কেন বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করে তাদের ছেলে মেয়েরা বিদেশে পড়তে যেতে পারবে না, থাকতে পারবে না। তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দিবে। কি জন্য? একজন অবৈধ প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় রাখার জন্য? অবৈধ প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় রাখার জন্য কেন বাংলাদেশের মানুষকে গুম করতে হবে। একজন অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর জন্য কেন ৪০ লক্ষের বেশি মানুষের নামে মিথ্যা গায়েবী মামলা হতে হবে। কেন গণমাধ্যমের গলা চেপে ধরতে হবে। কেন বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিতে হবে।
 আমীর খসরু আরো বলেন, বাংলাদেশ এখন ক্রান্তিলগ্নে। বাংলাদেশের মানুষ এখন জেগে উঠেছে। ফরিদপুরবাসী জেগে উঠেছে। অনেকেই বলে ফরিদপুরে নাকি ধানের শীষের অভাব আছে। আমিতো কোন অভাব দেখছি না। আমিতো দেশনেত্রী খালেজা জিয়ার সমর্থক ছাড়া অন্য সমর্থন দেখছি না। ভয়ভীতির কারণে অনেকে হয়তো চেপে বসে আছে। আজকে যদি সুষ্ঠু ভোট হয় তাহলে ফরিদপুরে নৌকার কোন ভবিষ্যত নাই। ফরিদপুরে ধানের শীষের জয়জয়কার হবে। ফরিদপুরের মানুষ বাংলাদেশের জনগনের পক্ষে অবস্থান করবে। ফরিদপুরের মানুষ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক সাংবিধানিক অধিকারের জন্য রাস্তায় লড়ে যাচ্ছে। আগামী দিনে যে ডাক আসবে সবাইকে রাস্তায় থাকতে হবে। তারেক রহমান বলেছেন ফয়সালা রাস্তায় হবে। সুতরাং রাস্তায় আজ লক্ষ লক্ষ জনতা নেমেছে। ফয়সালা করে আমরা বাড়ী ফিরে যাবো।
 বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুল আবেদীন ফারুকের সভাপতিত্বে ফরিদপুর বিভাগীয় এই রোডমার্চের পথসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বক্তব্য দেন।
 এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে ফরিদপুর বিভাগীয় রোড মার্চের প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল মিন্টু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য জহুরুল হক শাহজাদা মিয়া, রোড মার্চের সমন্বয়ক ও বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার  মাশুকুর রহমান, সেলিমুজ্জামান সেলিম, রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহবায়ক এডঃ লিয়াকত আলী বাবু, যুগ্ম-আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ-সভাপতি এডঃ মোঃ আসলাম মিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশিদ হারুনসহ কেন্দ্রীয় বিএনপির ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দও ফরিদপুর বিভাগীয় ৫ জেলার সকলস্তরের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
 পথসভায় উপস্থাপনা করেন রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এডঃ কামরুল আলম ও যুগ্ম-আহ্বায়ক রেজাউল করিম পিন্টু।
 বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক বলেন, বাংলাদেশের মরা মানুষের ভোট চুরি করেছে শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছে শেখ হাসিনা। জীবন যাবে, রাস্তায় রক্ত দেবো তারপরও এই অবৈধ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে দিবো না। সাত কথার সাফ জবাব খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।
 প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, বর্তমান সরকার একটি অবৈধ ভোট চোর সরকার। এই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাবো না। এই সরকারের পতনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের জয় হবে। দেশের মানুষ ভোটাধিকার ফিরে পাবে। এখন আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে মাঠে থেকে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার তাকে বিদেশে পাঠাচ্ছে না। তাকে মেরে ফেলার জন্য সরকার চক্রান্ত শুরু করেছে। এই চক্রান্তকে আমাদের প্রতিহত করতে হবে। আমাদের লড়াই এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে। আমাদের এই লড়াই এখন চুড়ান্ত পর্যায়ে রূপ নিয়েছে। আমরা লড়াই করে এই সরকারের পতন ঘটাবো ইনশাআল্লাহ।
 বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল মিন্টু বলেন, অবৈধ সরকার জণগণের টাকা মেরে বিদেশে পাচার করছে। তারা দেশের টাকা লুট করে বিদেশে সাম্রাজ্য বানাচ্ছে। অথচ দেশের মানুষ এখন না খেয়ে মরছে। আমাদের গণতন্ত্রের মানুষ কন্যা বেগম খালেদা জিয়াকে তারা হত্যা করার পরিকল্পনা করছে। আমাদের নেত্রী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ, তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার দরকার। কিন্তু এই অবৈধ সরকার আমাদের নেত্রীকে হত্যা করার জন্য তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। আমরা বলতে চাই শেখ হাসিনা আপনি কিসের এত ভয় পান..? আমাদের নেত্রীকে আপনি কেনো বিদেশে পাঠাচ্ছেনা জনগণ সেটা জানে। তাই বলতে চাই অবিলম্বে সরকার থেকে পদত্যাগ করুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। তা না হলে আন্দোলন করে আপনাকে ক্ষমতা থেকে নামানো হবে।
 বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, আজকের এই রোড মার্চ অবৈধ, ভোট চোর, অনির্বাচিত, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে। এই রোড মার্চের বিরুদ্ধে অবৈধ সরকারের পতন ঘটবে। এই সরকারের পতন না করে আমরা মাঠ ছাড়বো না। আমাদের এক দফা এক দাবী এই সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাবো না।
 জানা গেছে, ফরিদপুর বিভাগীয় রোড মার্চটি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ মোড় থেকে শুরু হয়ে ফরিদপুর-ভাঙ্গা-গোপালগঞ্জ-মাদারীপুর হয়ে শরীয়তপুরে যাবে। সেখানে একটি জনসভার মাধ্যমে রোড মার্চটি শেষ হবে।

 

রাজবাড়ীতে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসে বর্ণাঢ্য র‌্যালী ও আলোচনা সভা
রাজবাড়ী সফরে নির্বাচন কমিশনার মোঃ আলমগীর
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে রাজস্ব সম্মেলনসহ কয়েকটি সভা
সর্বশেষ সংবাদ