ঢাকা রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
প্রধান শিক্ষকের ভুলে এসএসসি পরীক্ষা দেয়া হলো না রিপনের
  • পাংশা প্রতিনিধি
  • ২০২৪-০২-১৭ ১৪:২৪:১৯

রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলায় টাকা দিয়েও এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ হয়নি রিপন শেখ নামের এক শিক্ষার্থীর। ফলে এ বছর সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। 

 এ বিষয়ে পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন রিপন।

 রিপন শেখ পাংশা উপজেলার মাছপাড়া ইউনিয়নের মেঘনা খামারপাড়া গ্রামের দিন মজুর অলিল শেখের ছেলে।

 জানা গেছে, রিপন শেখ মাছপাড়া ইউনিয়নের মেঘনা হাই স্কুলের দশম শ্রেণির মানবিক শাখার ছাত্র। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য সে বিদ্যালয় থেকে নির্বাচনী পরীক্ষা দিয়ে তিন বিষয়ে অকৃতকার্য হয়। পরে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকে ৪হাজার টাকা চেয়েছিলো। কিন্তু রিপনের মা শিল্পী খাতুন অনেক কষ্টে ফরম পূরণের জন্য কুদ্দুস স্যারের কাছে ২হাজার ৫০০ টাকা জমা দেয়।

 গত ১০ই ফেব্রুয়ারী বিদ্যালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠিত শিক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিক ভাবে ফুল দিয়ে রিপন শেখকে বিদায় জানায় শিক্ষকরা। পরে ১৪ই ফেব্রুয়ারী বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থীকে এডমিট কার্ড প্রদান করা হয়। তবে এডমিট কার্ড মেলেনি রিপন শেখের। বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আরিফুল ইসলাম পিন্টু পরীক্ষার্থী রিপনকে জানায়, তার এডমিট কার্ড হয়নি। পরীক্ষার একদিন আগে এমন কথা শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরে রিপনের।

 শিক্ষার্থী রিপন শেখ জানায়, পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য প্রধান শিক্ষক ৪হাজার টাকা চেয়েছিলো। কিন্তু মা অনেক কষ্টে ২হাজার ৫০০ টাকা জোগাড় করে স্যারকে দিয়েছিলো। এছাড়া বিদায় অনুষ্ঠানের জন্য ৫০০ টাকা ও এডমিট কার্ড গ্রহণের জন্য ৩০০ টাকা অতিরিক্ত দিয়েছিলাম। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদ্যালয় থেকে বিদায়ও নিয়েছিলাম। কিন্তু পরীক্ষার আগের দিন এডমিট কার্ড আনতে গেলে তাকে জানানো হয় তার এডমিট কার্ড হয়নি।

 রিপনের মা শিল্পী খাতুন বলেন, আমার স্বামী একজন দিন মুজুর। আমি পরের বাড়িতে কাজ করে কোন মত খেয়ে না খেয়ে সংসার চালাই। রিপনের ফরম পূরণের জন্য ৪হাজার টাকা দাবি করে বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল কুদ্দুস। আমি প্রতিবেশির কাছ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা ধার করে নিয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুসের কাছে দেই। তবুও আমার ছেলে পরীক্ষা দিতে পারলো না। পরীক্ষা না দিতে পেরে আমার ছেলে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল।

 তিনি আরো জানান, এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল কুদ্দুসের বিচার দাবি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।

 বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ আরিফুল ইসলাম পিন্টু বলেন, দুই মাস হলো আমি এই স্কুলে যোগদান করেছি। আমি যোগদানের আগেই ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপ হয়েছে। তৎকালীন প্রধান শিক্ষক বিষয়টি সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন। আমার বিদ্যালয় থেকে এবার ৭৭ জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। যাদের মধ্যে ১৭ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে অনিয়মিত। তবে আমি শুনেছি, রিপনের ফরম পূরনের জন্য তৎকালীন প্রধান শিক্ষকের কাছে টাকা জমা দিয়েছিল তার পরিবার।

 বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আমি দুই মাস আগে অত্র বিদ্যালয় থেকে অবসরজনিত কারণে বিদায় নিয়েছি। আমি বিদায় নেওয়ার আগেই ২০২৪ সালের পরিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ সম্পন্ন হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীর মা আমার কাছে টাকা দিয়েছিল মনে হয়। শিক্ষার্থী নিজে আমার কাছে টাকা দিলে ফরম পূরণের বিষয়টি আমার মনে থাকতো। রিপনের ফরম পূরণের বিষয়টি কোন কারণে হয়তো আমার মিসটেক হয়ে গেছে।

 পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে গত ১৫ই ফেব্রুয়ারী একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি দ্রুততার সাথে সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে বলা হয়েছে।

 এ ঘটনায় শিক্ষার্থী রিপন শেখের সহপাঠিরা দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং রিপন পরীক্ষা না দিতে পারার জন্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দায়ী করেছেন।

১২তম জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস কাল
রাজবাড়ী শহরের রেলওয়ে মাঠে জমে উঠেছে মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলা
বড় কাভার্ড ভ্যান চালকদের গলার কাঁটা নতুন ৬ ফেরী!