ঢাকা রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
গোয়ালন্দের চরাঞ্চলে পেঁয়াজ রসুনের ঘ্রানে পথিক ও কৃষকরা মাতোয়ারা
  • গোয়ালন্দ প্রতিনিধি
  • ২০২৪-০২-১৮ ১৪:১০:৩৯

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে আবাদি জমি থেকে উত্তোলন করা পেঁয়াজ ও রসুনের ঝাঁজালো ঘ্রাণে পথিক ও স্থানীয় লোকজন মাতোয়ারা। সেই সাথে ভালো দাম পেয়ে কৃষকদের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। 

 উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, গোয়ালন্দ উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এ বছর ২হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ ও ১হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হয়েছে। 

 একাধিক কৃষকরা জানান, এ বছর বিঘা প্রতি ৬০-৭০ মণ  পেঁয়াজ ও ৪০-৪৫মণ রসুন উৎপাদন হচ্ছে। তবে বেড়ীবাঁধ বেষ্টিত এলাকার চেয়ে পদ্মা পাড়ের চরাঞ্চলের অধিকাংশ জমিতে এ পেঁয়াজ-রসুনের আবাদ বেশি হয়েছে। গোয়ালন্দে সাধারণত লাল তীর ও তাহেরপুরী জাতের পেঁয়াজ ও স্থানীয় জাতের রসুন আবাদ করা হয়।

 সরেজমিনে উপজেলার দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম, উজানচর ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, দিগন্ত জোড়া মাঠকে মাঠ পেঁয়াজ আর পেঁয়াজ, রসুন আর রসুন। কৃষকরা ক্ষেতে  বসে কেউ পেঁয়াজ-রসুন তুলছে, কেউ বস্তা জাত করছে। কেউবা ভ্যানে করে বিভিন্ন হাট বাজারে নিয়ে যাচ্ছে। কোথাও আবার বেপারীরা মাঠ থেকেই কৃষকদের সাথে দাম দর মিটিয়ে কিনে নিচ্ছেন। কেউবা আবার তোলার আগেই ক্ষেত ধরে কিনে নিয়ে নিজেদের শ্রমিক খরচে ক্ষেত থেকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় দেখা গেছে, প্রায় জমিতেই প্লাস্টিকের নেট বস্তায় লাল সাদা রঙের রসুন ভরা সারি সারি বস্তা দাঁড় করানো। নারী-পুরুষদের পাশাপাশি শিশুরাও রসুন সংগ্রহের কাজ করতে দেখা যায়। পেঁয়াজ তোলার পর ক্ষেতে বসে কাঁচি, বটি, দা, ছুরি দিয়ে রসুন ও পেঁয়াজের গাছ ও শিকর কেটে পরিস্কার করে বস্তায় ভরে বাজারজাত করা হচ্ছে।

 এ সময় পেঁয়াজ রসুনের ঝাঁঝালো ঘ্রানে নাক মুখ তেঁতেঁ উঠছিল। রসুনের চেয়ে পেঁয়াজের ঝাঁজে চোখে পানি এসে যায়। তবে রসুনের ঘ্রান অনেক দুর প্রর্যন্ত বাতাসে ভেসে যায়।

কৃষকরা জানান, এবার তারা ভাল ফলন ও দাম পেয়ে অনেক খুশি তারা। প্রতি মণ পেঁয়াজ ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা ও রসুন ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছে বলে তারা জানান।

 তবে কোন কোন কৃষক আক্ষেপের সুরে বলেন, টেলিভিশন ও খবর পত্রে আমরা যে হারে পেঁয়াজ রসুনের চরা দর দেখি আমরা সে হারে দাম পাইনা। আমাদের কাছ থেকে যেকোনো ফসল ব্যাবসায়ীদের কাছে গেলেই তার দাম বেড়ে যায়। আমাদের কাছ থেকে কম দামে কিনে বাজারে নিয়ে কারসাজি করে তারা চড়া দামে বিক্রি করে। আমরা ন্যায্য দাম পাইনা। এটাতো আপনারা দ্যাখেন না।

 দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা, উত্তর চর পাচুরিয়া, কাওলজানি, মুন্সি পাড়া, অন্তার মোড়, দৌলতদিয়া ইউনিয়নের কুশাহাটা, বেতকা, রাখালগাছি, বাহেরচর, বেপারিপাড়া, মজলিসপুর, সিরাজ খাঁর পাড়া, তমিজদ্দি মৃধা পাড়া, উজানচর ইউনিয়নের মৈজদ্দন মন্ডের পাড়া, জামতলা, দরাপের ডাঙ্গা, দুদুখান পাড়া, ছোটভাকলা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে কৃষকদের সাথে আলাপকালে পেঁয়াজ-রসুন আবাদ ও  বাজারজাত করণের সুবিধা অসুবিধার বিষয়ে নানা তথ্য পাওয়া যায়। 

 তারা জানান, বর্তমানে কৃষি অফিস থেকে সার ও নানা জাতের বীজ বিনামূল্য প্রদান করা হয়। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের স্বজনপ্রীতির কারণে প্রকৃত কৃষকেরা ওইসব বিনামূল্যে বিতরণকৃত কৃষি উপকরণ পায়না। 

এ সময় তমিজদ্দিন মৃধা পাড়ার শামসু মোল্লা, মোহাম্মদ আলী, শাহাদাত হোসেন, আলামীন সাজাই বেপারী, সিরাজ খাঁ পাড়ার নিজাম খান, আশিকুর রহমান, আতিক তারেক সহ একাধিক কৃষক বলেন, আলহামদুলিল্লাহ এ বছর  পেঁয়াজ-রসুনের ফলন ভালো হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার দামও ভালো পেয়েছি। তবে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে এসে আমাদের খোজ খবর নিলে জমির উর্বরতা অনুযায়ী আমরা আরো ভালো ফসল ফলাতে পারবো। আগে ইমরান আর ওমর আলী আমাদের সাথে যোগাযোগ করতো। এখন আর মাঠ পর্যায়ে কাউকে পাওয়া যায় না। তবে এ বিষয়ে ইউনিয়ন কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, আমাদের দায়িত্ব সব সময় এক জায়গায় থাকে না। যখন যে এলাকায় যার দায়িত্ব হয় তখন সেই তার এলাকা দেখি।

 গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ খোকনউজ্জামান জানান, গোয়ালন্দের কৃষকরা এখন আগের চেয়ে অনেকটা সচেতন। প্রত্যেক মাঠে এবার ভালো পেঁয়াজ রসুনের আবাদ হয়েছে। কৃষকরা দামও ভাল পেয়ে খুশি। প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের আরো সচেতন ও অভিজ্ঞ করে নতুন প্রযুক্তির চাষাবাদ পদ্ধতির মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করে প্রধানমন্ত্রীর কৃষি বিষয়ক স্বপ্ন পূরণে আমরা কাজ করে চলেছি।

 
আন্তঃনগর মধুমতী এক্সপ্রেসে প্রায়ই যান্ত্রিক ত্রুটি॥বেড়েছে যাত্রী ভোগান্তি
রাজবাড়ী জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সিরাজ-সম্পাদক উৎসব
১২তম জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস কাল
সর্বশেষ সংবাদ