পদ্মা-যমুনা নদীতে তীব্র স্রোতে স্বাভাবিক গতিতে চলছেনা ফেরী

॥আবুল হোসেন॥ কঠোর লকডাউন শিথিলের দ্বিতীয় দিনে রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া ঘাটে গতকাল ১৬ই জুলাই ফেরী পারের জন্য ঘাটে আসা কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী যানবাহনের দীর্ঘসারি হয়ে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। 

  আটকে থাকা যাত্রী, গরুর মালিক ও বেপারীরা সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ৬ থেকে ১০ ঘন্টার আগে গরুর গাড়িগুলো ফেরীর নাগাল পাচ্ছে না। এতে করে প্রখর রোদ-গরমে অনেক গরু অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

  গতকাল শুক্রবার সরেজমিন দৌলতদিয়া ঘাট ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই ঘাটে গরু বোঝাই ট্রাক ও যাত্রীবাহী গাড়ির প্রচুর চাপ। ঢাকা ও আশপাশ অঞ্চল থেকেও লঞ্চ ফেরীযোগে ঘরে ফিরছে প্রচুর যাত্রী। নেই কোন স্বাস্থ্যবিধি। বেলা ৪টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ফেরী ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে বাংলাদেশ হ্যাচারী পর্যন্ত প্রায় ৩কিঃ মিঃ যানবাহনের দুইটি সারি সৃষ্টি হয়েছে। ৬শতাধিক যানবাহনের মধ্যে রয়েছে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস ও কাভার্ড ভ্যান। 

  পাশাপাশি দৌলতদিয়া ঘাটের উপর চাপ কমাতে ১৩কিলোমিটার দূরে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গোয়ালন্দ মোড় থেকে কল্যাণপুর পর্যন্ত প্রায় ৩কিলোমিটার জুড়ে অপচনশীল আরো ৫শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে পাবলিক টয়লেট এবং খাবার হোটেল না থাকায় ট্রাকের চালক ও হেলপারদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

  এ নৌরুটে ছোট-বড় ১৫টি ফেরী চলাচল করছে। যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আরো ফেরী বাড়নো দরকার। তাছাড়া পদ্মা-যমুনা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরীগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারছে না। ফলে ঘাট এলাকায় যানবাহন আটকে দীর্ঘ সিরিয়ালের সৃষ্টি হচ্ছে।

  ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু হতে আসা খামারি জাফর ইকবাল মিন্টু বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় তিনি দুইটি ট্রাকে ১৭টি গরু ও ৫টি খাসি নিয়ে হরিনাকুন্ডু হতে রওনাদেন। রাত ২টার দিকে তারা দৌলতদিয়া ঘাটে এসে দীর্ঘ সিরিয়ালে আটকা পড়েন। গতকাল শুক্রবার বেলা ১২ পর্যন্ত তাদের গাড়ি লঞ্চ ঘাটের টার্ণিং পর্যন্ত আসতে পেরেছে। ফেরীর নাগাল পেতে আরো ১ঘন্টার মতো হয়তো লাগবে।

  এ দীর্ঘ সময় ঘাটে আটকে থেকে তিনিসহ গরুর রাখালরা প্রচন্ড দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। দুপুরের দিকে তার একটি বড় গরু ক্লান্ত হয়ে গাড়িতেই পড়ে যায়। দীর্ঘ সময় তার মাথায় ঠান্ডা পানি দিলে পরে কিছুটা সুস্থ্য হয়।  

  এদিকে লঞ্চে আসা যাত্রী মোঃ কুদ্দুস মোল্লা বলেন, গাজিপুর থেকে চুয়াডাঙ্গায় বাড়ীতে যাচ্ছি। পাটুরিয়া থেকে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়ছে। লঞ্চের মধ্যে কোন সামাজিক দূরত্ব ছিলোনা। পূর্বের মতো পাশাপাশি বসে আসলাম। 

  বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক  শিহাব উদ্দিন বলেন, আমাদের নির্দেশনা দেয়া আছে কোরবানি পশুবাহী ট্রাকগুলোকে অগ্রধিকার ভিত্তিতে নদী পার করার। আমরা সে ভাবেই কাজ করছি। তবে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় এবং নদীতে তীব্র স্রোতে ফেরী চলাচল ব্যাহত হওয়ায় অনেক গাড়ি ঘাটে আটকা পড়ছে। বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ছোট, বড়  ১৫টি ফেরী দিয়ে যানবাহন পারাপার হচ্ছে। দ্রুত আরো ২টি ফেরী যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।