রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের উত্তর চর পাঁচুরিয়া গ্রামে গত ২৬শে জুলাই রাতে ওয়ারেন্টের আসামী গ্রেফতারে পুলিশী অভিযানের সময় আপন ভাই-ভাতিজার মারপিটে আব্দুল লতিফ শেখ(৭৬) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
নিহত আব্দুল লতিফ শেখ উত্তর চর পাঁচুরিয়া গ্রামের মৃত নাটোর শেখের ছেলে।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে কয়েক মাস আগে নিহত আব্দুল লতিফ শেখ ও তার ভাই আব্দুল কুদ্দুস শেখের পক্ষের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে আনোয়ার হোসেন শেখ বাদী হয়ে আব্দুল লতিফ শেখসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় তারা আদালত থেকে জামিন নেন। কিন্তু মামলার গত ধার্য্য তারিখে হাজির না হওয়ায় আদালত তাদের জামিন বাতিল করে গ্রেফতারী পরোয়ানার(ওয়ারেন্ট) আদেশ দেয়। এর প্রেক্ষিতে গত ২৬শে জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশের একটি দল আসামীদের ধরতে যায়। তারা আব্দুল লতিফ শেখের ভাই ইছাক শেখ ও তার ছেলে সবুজ শেখকে গ্রেফতার। পুলিশের অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে আব্দুল লতিফ শেখ বসত ঘর থেকে বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশকে সহায়তাকারী মামলার বাদী আনোয়ার শেখ ও তার পিতা আব্দুল কুদ্দুস শেখসহ ৩/৪ জন আব্দুল লতিফ শেখকে ধাওয়া করে। পরবর্তীতে পুলিশ গ্রেফতারকৃত ২জনকে নিয়ে ফিরে গেলে আব্দুল লতিফ শেখের পরিবারের সদস্যরা তাকে খুঁজতে খুঁজতে বাড়ী থেকে একটু দূরে আব্দুল লতিফ শেখকে আহত হয়ে পড়ে থাকতে দেখে। পরে আব্দুল লতিফ শেখকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত আব্দুল লতিফ শেখের স্ত্রী সহিতন বিবি জানান, তার স্বামী সুস্থ শরীরে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে ছিলেন। পুলিশের ভয়ে ঘর থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় আমার সামনেই ওরা তাকে ধাওয়া দেয়। পরে তাকে ধরে মারপিট করে হত্যা করেছে। আমি এর বিচার চাই।
নিহতের ছেলে মোঃ আলমগীর শেখ বলেন, তার বাবা সহজ-সরল মানুষ ছিলেন। পুলিশের ভয়ে তিনি পালানোর সময় ওরা তাকে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হবে।
স্থানীয় আক্তার সরদার জানান, ঘটনার পর আব্দুল লতিফ শেখের কাছে গিয়ে দেখি সে আহত হয়ে নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে আছে। তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়। কুদ্দুস ও আনোয়ারের মারপিটেই আব্দুল লতিফ শেখের মৃত্যু হয়েছে।
অভিযুক্ত আনোয়ারদের বাড়ীতে গিয়ে তাদেরকে পাওয়া যায়নি। এ সময় তার স্ত্রী রোজিনা বেগম বলেন, তারা কোথায় গেছে জানি না। তারা কাউকে মারেনি। পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে কোনো কিছু সাথে আঘাত পেয়ে অথবা স্ট্রোক করে আব্দুল লতিফের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত আসামীদের ধরার জন্য পুলিশ সেখানে যায়। ২জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসার পর ওখানে একটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। পরে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ বিষয়ে এখনও কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।