ঢাকা রবিবার, জুলাই ৬, ২০২৫
রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীতে প্রত্যাশিত মাছ মিলছে না॥হতাশায় জেলেরা
  • মইনুল হক মৃধা
  • ২০২৩-০৮-৩১ ১৫:৩২:৩৩

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে পদ্মা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধির কারণে নদীতে তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। হতাশায় জেলেদের মধ্যে অনেকেই জাল গুটিয়ে রাখছেন। ইলিশের ভরা মৌসুমে রূপালী ইলিশের দেখা মিললেও বছরের অধিকাংশ সময়ই পাওয়া যায় না ইলিশ। এ নিয়ে হতাশা বিরাজ করছে জেলার হাজারো মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানায়, নদীতে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে মাছ কম ধরা পড়ছে।

জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে ৪ উপজেলা পদ্মা ও একটি উপজেলা গড়াই নদী বিধৌত। পদ্মার পাশাপাশি গড়াই নদীতেও মিলত ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ। এর মধ্যে দিন দিন ইলিশের উৎপাদন কমতে শুরু করেছে এ জেলায়। 

২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে জেলায় ৮২৬ মেট্রিক ইলিশ উৎপাদন হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১০ মেট্রিক টন কম।

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী পদ্মা নদীতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৯৭ মেট্রিক টন, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ৮৩০ টন, ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৮১১ দশমিক ৮৬ টন ও ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ৮৩৬ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। এ ছাড়া ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ৮২৬ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে, যা আগের অর্থ বছরের চেয়ে ১০ মেট্রিক টন কম। 

জেলেদের অভিযোগ, প্রজনন মৌসুমে যখন ইলিশ ধরা বন্ধ ছিলো তখন অনেক জেলেই সরকারীভাবে কোনো সহায়তা পাননি। এমনকি সরকারীভাবে জেলে নিবন্ধন তালিকা থেকে বাদ পড়েছে অনেক প্রকৃত জেলে। তবে মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন, প্রকৃত জেলেদের নিবন্ধন তালিকা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার এখনো সুযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে দৌলতদিয়া ৭নম্বর ফেরী ঘাট সংলগ্ন সাত্তার মেম্বার পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে অনেক জেলেরা পাড়ে নৌকা ভিড়িয়ে জাল মেরামত করছে। আবার কেউ কেউ নৌকার মধ্যে ঘুমিয়ে রয়েছে। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছেঁড়া-ফাটা জাল মেরামত করছেন। কেউবা জাল গুটিয়ে খামাল(স্তুপ) দিয়ে রাখছেন। আবার কেউ নৌকার সংস্কার কাজও করছে।

নদীর পাড়ে বসে ছেঁড়া জাল মেরামতকালে লাল চাঁদ নামে এক জেলে বলেন, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে ৬দিন যাবত কোন মাছ পাইনি। আজ একবার নৌকা নিয়ে নদীতে সহযোগীদের নিয়ে গিয়েছিলাম। কোন মাছ না পাওয়ায় নদীর পাড়ে হাল মেরামত করছি। আমাদের সুতি জালে বড় মাছ ধরা পড়ে। জাল ছেড়া থাকলে ছোট ছোট মাছ বেড়িয়ে যায়। তাই সকলে মিলে জালগুলো ঠিক করছি।

জেলে হোসেন আলী বলেন, একসময় পদ্মা নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ত, তখন দামও কম ছিলো, এখন পদ্মায় মাছ কমে যাওযায় বেশি দামে ইলিশ কিনতে হচ্ছে। এ কারণে মধ্য আয়ের মানুষের ইলিশ কেনার সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। সপ্তাহ খানেক হলো কোন মাছই পাইনা। নৌকায় রান্না করার মতও কোন মাছ জালে উঠছেনা। আজ নৌকায় মুগডাল রান্না ও আলু ভর্তা করেছি। ‘আমার দুটি নৌকায় ১০ জনের প্রতিদিন গড়ে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। বর্তমানে ধার দেনা করে আমাদের খেতে ও চলতে হচ্ছে।

দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ফেরী ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী মোঃ শাহজাহান শেখ বলেন, আমরা জেলেদের ওপর নির্ভরশীল। তারা যদি মাছ না পায় তাহলে আমরা কীভাবে মাছ কিনব, আর কীভাবে এই মাছ অন্যত্র বিক্রি করে ব্যবসা করব। তারা যেমন মাছ না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হন, ঠিক তেমনি আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হই।

গোয়ালন্দ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা রাজবাড়ী সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তফা আল রাজীব বলেন, এ বছর পদ্মায় অপেক্ষাকৃত ইলিশ কম লক্ষ্য করা গেছে। অভিযান পরিচালনার সময় দেখা যায় ইলিশ কম। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে নদীর বিভিন্ন জায়গায় চর পড়ে যাচ্ছে এবং নদীর অনেক অংশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে চর পড়ার কারণে ইলিশের যে গতিপথ তা বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং বৃষ্টিপাতও এ বছর কম হচ্ছে। যার কারণে জেলেরা যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার কথা সে পরিমাণে পাচ্ছে না। আমরা দেখছি বর্তমানে সাগড়ে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে, আমরা আশা করছি সামনের দিনগুলোতে যদি সাগড়ে বা নদীতে কোন বাঁধা না পড়ে তাহলে পদ্মা নদীতে জেলেদের জালে আবার ইলিশ ধরা পড়বে।

তিনি আরও বলেন, জেলেদের আমরা সবসময় নিরুৎসাহিত করি। নদীতে যারা অবৈধ জাল দিলে ছোট ছোট মাছের পোনা ও মাছ ধরছে তাদের জন্যও বড় মাছ কমে যাচ্ছে।

পাংশা উপজেলায় বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন
বালিয়াকান্দিতে নসিমন উল্টে খাদে পড়ে মেঘনা গ্রুপের বিক্রয় প্রতিনিধি নিহত
গোয়ালন্দে আয়েশা আলী নেওয়াজ মহিলা মাদ্রাসা ও এতিমখানার কার্যক্রম উদ্বোধন
সর্বশেষ সংবাদ