ফৌজদারী আদালতে বিচারাধীন মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আসামীদের পক্ষ নিয়ে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে মামলার ভিকটিমের চরিত্র সম্পর্কে মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ তথ্য এবং আসামীদের নির্দোষ দাবী করে নিঃশর্তে মুক্তি চেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করার অপরাধে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
গত ১২ই অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি শাখা-১ এর সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমীন প্রধান স্বাক্ষরিত ১০৩৪ নম্বর প্রজ্ঞাপনে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান রাজবাড়ী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মূলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ফৌজদারী আদালতে বিচারাধীন মামলার মেরিট কে আসামীদের অনুকূলে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কর্তৃক এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে মামলার ভিকটিম সম্পর্কে মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ তথ্য দিয়ে প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় এবং চেয়ারম্যান কর্তৃক কারণ দর্শানোর জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় স্থানীয় সরকার(ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯-এর (৩৪)(৪)(খ)(ঘ) ধারা অনুযায়ী রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামানের উল্লিখিত অভিযোগে তার দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ সমীচীন নয় মর্মে সরকার মনে করে। ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান কর্তৃক সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদসহ জনস্বার্থের পরিপন্থি বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯-এর (৩৪)(৪)(খ)(ঘ) ধারায় অপরাধ সংঘটিত করায় উল্লিখিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে স্বীয় পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ১লা মার্চ দিনগত রাত ৩টার দিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের পশ্চিম মূলঘর গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী মওদুদ মিয়া পান্নার স্ত্রী বিউটি আক্তার বৃষ্টি (২৩)কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ৮ই মার্চ বিউটির শ্বাশুড়ি মোছলেমা পারভীন বাদী হয়ে পূর্ব মূলঘর গ্রামের এহতেশামুল হক ফারুক(৫৫) ও একই গ্রামের ফরিদ সরদার (৪৭) সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। আদালতে বিচারাধীন মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে ১৭ই মার্চ মূলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান আসামীদের পক্ষ নিয়ে মামলার ভিকটিম বিউটি বেগমের চরিত্র সম্পর্কে মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ তথ্য দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করেন। ওই প্রত্যয়নপত্রে আসামীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিও জানান ইউপি চেয়ারম্যান।
প্রত্যয়নপত্র ইস্যুর বিষয়ে ভুক্তভোগী বিউটি আক্তার বৃষ্টি স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০২২ সালের ১৩ই অক্টোবর রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এবং চেয়ারম্যান কর্তৃক কারণ দর্শানোর জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯-এর (৩৪)(৪)(খ)(ঘ) ধারা অনুযায়ী জেলা প্রশাসক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন। যার ভিত্তিতে ইউপি চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।