বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেন, ক্ষমতায় গিয়ে সবাই শ্রমিকের কথা ভুলে যায়। শুধু প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় গিয়ে শ্রমিকদের জন্য কাজ করেছিলেন। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের শ্রমিকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে।
গতকাল ১লা মে বিকেলে রাজবাড়ী শহরের রেলগেটস্থ বটতলায় মহান মে দিবস ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল রাজবাড়ী জেলা শাখার আয়োজনে বিশাল শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক এমপি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেন, জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানেও আমাদের শ্রমিকরা রক্ত দিয়েছে। প্রায় ২৪৪ জন শ্রমিক পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছে। এই বাংলাদেশে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন হয়েছে, আটষট্টি ও উনসত্তরে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে, বিরাশির পর এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। এই বাংলাদেশে বারবার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, শোষকদের বিরুদ্ধে, স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে মানুষ লড়াই করেছে। সেই লড়াইয়ে অগ্রভাগে আমার শ্রমিক ছিলো। শ্রমিকরা আন্দোলন না করলে কোন আন্দোলন সফলতা লাভ করতে পারত না। কিন্তু শ্রমিকের দিকে কেউ তাকায় না। শ্রমিকের পক্ষে কেউ কথা বলে না।
তিনি বলেন, এই সরকারের সময়ও গাজীপুরে একজন মহিলা শ্রমিককে হত্যা করা হয়েছে তার বোনাস চাওয়ার জন্য। এই সরকারের আমলেও আমাদের শুনতে হচ্ছে ঈদের সময় বিভিন্ন শিল্প অঞ্চলে আন্দোলন হচ্ছে, সংগ্রাম হচ্ছে বেতন ও বোনাসের দাবীতে। ঈদ আসে- যায় কিন্তু আমার শ্রমিকরা বেতন পায় না। তাই তারা আন্দোলনে নামে। এই জন্য শ্রমিকদের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন দরকার। ট্রেড ইউনিয়ন হল হলো শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের একটি সংগঠন।
তিনি আরো বলেন, যারা শ্রমিক তারা আজকেও ভালো জীবনযাপন করতে পারেনা। শ্রমিকরা যে বেতন, ভাতা পাচ্ছে তা দিয়ে তার সংসার চলে না। ছোট্ট কুটির সে বাস করে। অসুখ হলে সে অসুখের চিকিৎসা করাতে পারে না। আজকেও আমার শ্রমিক তার সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারে না, স্কুলে পাঠাতে পারেনা। ঈদের দিনে তার বাচ্চার একটা নতুন জামা কিনে দিতে পারে না। তারা তিনবেলা পেট ভরে ভাত খেতে পারে না। শ্রমিকরা কষ্টের একটা জীবন নিয়ে চলছে। আজকে বাংলাদেশের শ্রমিকরা ভালো নেই।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা সারা বাংলাদেশে দলীয়করণ করে সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। এই সরকারের সময়ও শ্রমিকদের সমস্যা এখনো যায়নি। শ্রমিকদের এখনো কষ্টে দিন কাটাতে হয়। সেই শ্রমিকদের অধিকার আদায় করতে হবে। শ্রমিক না থাকলে বাংলাদেশ চলবে না, কৃষক না থাকলে বাংলাদেশ চলবে না। দুই একজন সরকারী কর্মকর্তা না থাকলেও বাংলাদেশ চলবে। তাই শ্রমিককে বাঁচাতে হবে। শ্রমিককে মর্যাদা দিতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়ে বলেছেন ওই রাষ্ট্র গঠন করার জন্য আমাদের ঐকবদ্ধ থাকতে হবে, যে রাষ্ট্রে শ্রমিকরা মর্যাদা পাবে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে গোটা বাংলাদেশের শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
রাজবাড়ী জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আব্দুল গফুর মন্ডলের সভাপতিত্বে ও জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহ আলমের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক নঈম আনসারী, সাবেক সদস্য সচিব অধ্যক্ষ এবিএম মঞ্জুরুল আলম দুলাল, জেল বিএনপির সদস্য এ মজিদ বিশ্বাস, জেলা নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ আজিজ মন্ডল, জেলা হকার্স শ্রমিক দলের সভাপতি মোঃ আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস, সদর উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মোঃ লালন শেখ, পাংশা উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সোবহান মিয়া ও বালিয়াকান্দি উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আবুল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
শ্রমিক সমাবেশে জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক গাজী আহসান হাবীব, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রইচ উদ্দিন ডিউক, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আইয়ুবুর রহমান, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক খায়রুল আনাম বকুল, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কেএ সবুর শাহীনসহ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রমিক সমাবেশ শেষে জেলা জাসাসের আয়োজনে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।