ঢাকা শুক্রবার, আগস্ট ১, ২০২৫
পাংশায় মন্দিরে জমিদান করতে গিয়ে কমিটির প্রতারণায় সর্বশান্ত গুরুদাসী
  • মিঠুন গোস্বামী
  • ২০২৫-০৭-৩১ ১৫:৩০:৪৬

স্বামী প্রতিবন্ধী। নেই কোন সন্তান। শ্বশুরের দেওয়া মাত্র ১০ শতাংশ জমিই শেষ সম্বল। সেখান থেকে মন্দিরের নামে দিয়ে চেয়েছিলেন ৪ শতাংশ জমি। কিন্তু মন্দির কমিটি প্রতারণার মাধ্যমে তার ১০ শতাংশ জমিই লিখে নিয়েছে। 
 এমন ঘটনা ঘটেছে রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের বিলজোনা অষ্টাদশ পল্লী পাগল আশ্রয় (মন্দির) এর নামে জমি দান করতে যাওয়া দাতা গুরুদাসী মন্ডলের সাথে। 
 দাতা গুরুদাসী মন্ডল ওই এলাকার শান্তি রাম মন্ডলের স্ত্রী। কোন সন্তান না থাকায় স্বামীর প্রতিবন্ধী ভাতা ও সামান্য কৃষি কাজ করে চলে তার সংসার। 
 অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৩০শে জুলাই দুপুরে মন্দির কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দাতা গুরুদাসী মন্ডলকে পাংশা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে নিয়ে দলিল লেখকের মাধ্যমে প্রতারণা করে সম্পূর্ণ জমি লিখে নেয়। এ ঘটনা জানতে পেরে দাতা গুরুদাসী মন্ডল তার জমি ফিরে পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাব-রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। 
 প্রতারণার শিকার গুরুদাসী মন্ডল বলেন, আমার স্বামী প্রতিবন্ধী, আমাদের নেই কোন সন্তান। আমার শ্বশুর ১০ শতাংশ জমি আমার নামে লিখে দিয়েছিলেন। ওই জমির মাঝ দিয়ে পাকা রাস্তা গেছে। ফলে জমির কিছু অংশ (৪ শতাংশ) মন্দিরের পাশে আছে। মন্দির কমিটি আমাকে না জানিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। এরপর গ্রামবাসীর অনুরোধে ওই ৪ শতাংশ জমি আমি মন্দিরের নামে লিখে দিতে সম্মতি হই। তবে গত ৩০ শে জুলাই পাংশা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে জমি লিখে দিতে গেলে দলিল লেখক ও কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক প্রতারণার মাধ্যমে আমার ১০ শতাংশ জমিই লিখে নিয়েছে! ওরা সবাই শিক্ষিত বলে আমাকে বোকা বানিয়ে আমার শ্বশুরের দেওয়া সর্বশেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিল। আমি আমার জমি ফেরত চাই।
 অভিযোগের সত্যতা জানতে অষ্টাদশ পল্লী পাগল আশ্রয় (মন্দির) কমিটির সাধারণ সম্পাদক শৈলেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের মিটিংয়ে ওই জমির মালিক গুরুদাসী মন্ডল ১০ শতাংশ জমিই দিতে চেয়েছিলেন। জমি লিখে দিয়ে এসে কেনো এমন অভিযোগ উঠাচ্ছে আমি জানি না। তবে জমি রেজিস্ট্রির সময় দাতা এবং তার স্বামী ছাড়া তাদের পরিবারের কেউ ছিলেন না। দাতার সাথে কথা বলে দ্রুত সমস্যা সমাধানে কথাও বলেন তিনি।
 দলিল লেখক ও কমিটির ধর্মীয় সম্পাদক অজিত বিশ্বাসের সাথে মুঠোফোনে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কোন দোষ নাই। কমিটির লোক যা বলছে আমি তাই করছি। আপনি দাতার কাছ থেকে টিপসহি নেওয়ার আগে দলিল পড়ে শুনিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। মন্দির কমিটির প্রতারণার সাথে আপনিও জড়িত ছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনি এখন আমাকে বলছেন কেনো, জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার আগে বলতেন!
 দাতার স্বামী প্রতিবন্ধী শান্তি রাম মন্ডল বলেন, আমি লেখাপড়া জানি না। জমি সম্পর্কেও কিছু বুঝি না। সকালে মন্দির কমিটির লোকজন আমার আর আমার স্ত্রীকে পাংশায় নিয়ে যায়। সেখানে আমার স্ত্রীর কাছ থেকে টিপসহি নিয়েছে। বাড়ী এসে জানতে পারি আমার সব জমিই ওরা লিখে নিয়েছে। 
 দাতার দেবর ধীরেন্দ্র নাথ মন্ডল বলেন, আমার বাবা আমার বউদির নামে ১০ শতাংশ জমি লিখে দিয়েছিলেন। ওই জমির ৪ শতাংশ মন্দিরের পাশে। মন্দির কমিটি কিছু না জানিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে। মন্দির পবিত্র স্থান তাই আমি আমার দাদা ও বউদিকে রাজি করাই ওই ৪ শতাংশ জমি মন্দিরের নামে লিখে দিতে। আজ হঠাৎ দুপুরে শৈলেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ফোন দিয়ে বলে তুমি কোথায়। আমরা জমি রেজিস্ট্রেশন করতে আসছি তুমি কি এখন আসতে পারবা? যদি না পারো তোমাকে সাক্ষী করব না। আমি তাদের জানাই আমি ছাড়াই রেজিস্ট্রি হলে করে আসেন। আমার মনে খটকা লাগে তারা কেনো আমাকে ছাড়াই দলিল করতে গেলো। রেজিস্ট্রি অফিসে অন্য একজনের মাধ্যমে তথ্য নিয়ে জানতে পারি তারা আমার বউদির নামের ১০ শতাংশ জমিই লিখে নিয়েছে। 
 পাংশা সাব-রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ মোমেন মিয়ার মুঠোফোনে এই প্রতিবেদক জানতে চান, আপনি কি দাতার কাছে জানতে চেয়েছিলেন তিনি কত শতক জমি মন্দিরের নামে দান করছে? এমন প্রশ্নে সাব-রেজিস্টার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, দলিল লেখক দাতার কাছ থেকে স্বাক্ষর নেওয়ার আগে তাকে পড়ে শোনান। দাতার কাছে আপনার বিষয়টি জানতে চাওয়া উচিত কি না? তিনি বলেন, ওই মহিলার সাথে তার অভিভাবক ছিলো।
 তারা বলছে মন্দিরের নামে জমি দান করছে। তবে দাতা লিখিত অভিযোগ দিলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 
 তবে এই সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি কখনো কোন দাতার সাথে কথা বলেন না। দলিল লেখক যা বলেন তাই শোনেন। কি কারণে তিনি দলিল লেখকদের কথায় কাজ করেন? একাধিক সূত্র বলছে পাংশা দলিল লেখক ও স্টাম্প ভেন্ডার সমিতির সিন্ডিকেটের কারণে তিনি দাতাদের সাথে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেন না। কারণ সমিতি দাতা গ্রহীতার কাছ থেকে জোরপূর্বক সরকার নির্ধারিত ফিসের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অতিরিক্ত টাকা আদায় করে। এর বড় একটা অংশ যায় সাব-রেজিস্ট্রারের পকেটে। ফলে সাব-রেজিস্ট্রার দলিল লেখকদের কথায় চলে। 
 এ বিষয়ে পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম আবু দারদা বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। দাতা আমার কাছে লিখিত অভিযোগে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

 

কালুখালীতে ৩০ কৃতি শিক্ষার্থীদের মাঝে সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট বিতরণ
পাংশা উপজেলা ও পৌর বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধন
পাংশায় মন্দিরে জমিদান করতে গিয়ে কমিটির প্রতারণায় সর্বশান্ত গুরুদাসী
সর্বশেষ সংবাদ