ঢাকা বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪
আলীপুরে ইউপি সদস্য কর্তৃক আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৭টি মেহগনি গাছ বিক্রি!
  • আশিকুর রহমান
  • ২০২২-০৫-০৯ ১৪:৫৮:১৩

রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের কল্যাণপুরে সরকারী আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি থেকে ১৭টি মেহগনি গাছ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য আরিফ হোসেনের বিরুদ্ধে। 

  কল্যাণপুর বাজারের কাঠ ব্যবসায়ী মনির হোসেনের কাছে ৪২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয় গাছগুলো। ইতিমধ্যে শ্রমিক দিয়ে ৭টি গাছ কেটেও ফেলেছে কাঠ ব্যবসায়ী মনির। এ বিষয়ে গতকাল ৯ই মে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।

  আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা বিপ্লব হোসেন বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কল্যাণপুর গ্রামের ৮ নং ওয়ার্ডে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আমাদের ২২টি পরিবারকে ঘর উপহার দেন। আমরা দেড় বছর ধরে এখানে বসবাস করে আসছি। ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার(ইউপি সদস্য) আরিফ হোসেন কাউকে না জানিয়ে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি থেকে ১৭টি মেহগনি গাছ কল্যাণপুর বাজারের কাঠ ব্যবসায়ী মনির হোসেনের কাছে ৪২ হাজায় টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। গত শুক্রবার সকালে মনির হোসেন গাছ কাটার শ্রমিক নিয়ে এসে গাছ কাটা শুরু করে। আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা গাছ কাটতে বাধা দিলে আরিফ মেম্বার আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেন। ওই দিন তারা ৬টি গাছ কেটে ফেলে এবং পরদিন শনিবার সকালে এসে তারা আরও একটি গাছ কাটে। আমরা বিষয়টি ইউএনও স্যারকে ফোনে জানালে তিনি আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে গাছ কাটা বন্ধ করেন। এখন কাটা ৭টি মেহগনি গাছ আশ্রয়ণ প্রকল্পেই রয়েছে। বাকি গাছগুলো যাতে না কাটা হয় এবং আরিফ মেম্বারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয় সে জন্য আমরা ডিসি স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

  প্রকল্পের বাসিন্দা ফরিদা বেগম বলেন, ‘গত শুক্রবার আরিফ মেম্বার এসে আমাদের বলেন যে, আমি উপর থেকে গাছ কাটার অর্ডার এনেছি। আপনারা গাছের নীচ থেকে আপনাদের জিনিসপত্র সরিয়ে দেন। এরপর শ্রমিকরা গাছ কাটা শুরু করে। আমরা বাধা দিলে আরিফ মেম্বার আমাদেরকে গালিগালাজ করে।’

  কাঠ ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, ‘ঈদের তিন দিন আগে আরিফ মেম্বার আমার কাছে এসে বলেন যে তিনি উপর থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৭টি মেহগনি গাছ বিক্রি করার অর্ডার এনেছেন। আমি গাছ কিনতে আগ্রহী কিনা তিনি আমার কাছে জিজ্ঞেস করেন। আমি অর্ডারের কাগজ দেখতে চাইলে মেম্বার বলেন কাগজপত্র সব ঠিক আছে, কোন সমস্যা নেই। মেম্বারের কথায় বিশ্বাস করে আমি গাছ কিনতে রাজী হই। এরপর গাছ দেখে তাকে নগদ ৪২ হাজার টাকা দেই। গত শুক্রবার ৬টি ও শনিবার ১টিসহ ৭টি গাছ কাটা হয়েছে। ইতিমধ্যে গ্রাম পুলিশ এসে জানায় আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাছ কাটতে নিষেধ করেছে। যে কারণে আমি শ্রমিকদের নিয়ে সেখান থেকে চলে আসি। এখনো পর্যন্ত কাটা গাছগুলো সেখানেই রয়েছে। আরিফ মেম্বারের কাছে আমি গাছের টাকা ফেরৎ চাইলেও তিনি টাকা ফেরৎ দিচ্ছেন না।’

  আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কার ছিদ্দিক বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি থেকে গাছ কাটার বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। গত শনিবার সকালে ইউএনও স্যারের কাছ থেকে ফোন পেয়ে আমি বিষয়টি জানতে পারি। তাৎক্ষণিক আমি আশ্রয়ণ প্রকল্পে গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করি। তবে আমি জানার আগেই কাঠ ব্যবসায়ী ৭টি গাছ কেটে ফেলে। কাটা গাছগুলো আমার জিম্মায় রয়েছে। এখন ইউএনও স্যারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

  সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মার্জিয়া সুলতানা বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি থেকে মেহগনি গাছ বিক্রির বিষয়টি আমি জেনেছি। যে গাছগুলো কাটা হয়েছে সেগুলো আলীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে তার জিম্মায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছি। পরবর্তীতে বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় গাছগুলো বিক্রি করে টাকা সরকারী কোষাগারে জমা করা হবে। এই গাছ বিক্রি ও কাটার সঙ্গে যারা জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

  বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গতকাল ৯ই মে সকাল ১০টার দিকে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আরিফ হোসেনের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বরে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এরপর তার বক্তব্য জানতে তার বাড়ীতে গেলে গাছ বিক্রি ও কাটার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি গাছ বিক্রি করেছি। আপনারা যা পারেন আমার বিরুদ্ধে লেখেন-সমস্যা নাই।’ এই প্রতিবেদক ইউপি সদস্য আরিফ হোসেনের বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করতে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবেদকের হাত থেকে ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মহান মে দিবসে র‌্যালী-আলোচনা সভা
রাজবাড়ীতে দুই ব্যাংকের  প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত
বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে রাজবাড়ীতে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে তরুণীর আত্মহত্যা
সর্বশেষ সংবাদ